“ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। সবাই নিজেদের অধিকার ভোগ করবেন; কোনো ধর্ম বা গোষ্ঠীর প্রতি সরকার পক্ষপাত করবে না; এটা ধর্মনিরপেক্ষতা।”
Published : 20 Jan 2025, 11:52 PM
জুলাই-অগাস্টের গ্রাফিতিতে যে আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে, অন্তর্বর্তী সরকার তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “গত সরকারের আমলে একটি বড় বিষয় ছিল ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’। সে কারণে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের পরেও ধর্মের নামে ‘বাক স্বাধীনতার বিরোধিতা’ করা হচ্ছে।”
‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শিরোনামে দিনব্যাপী এই সেমিনার আয়োজন করে ‘সর্বজনকথা’ নামের একটি সংগঠন।
তাতে আনু মুহাম্মদ বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক পুরনো। একাত্তরও গণঅভ্যুত্থান ছিল। দেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থানের সময়ই স্বাধীন থাকে।”
এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করে ভারতের মুসলমানদের ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নতুন সংবিধান প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেয়া হয়েছে। আবার আমাদের বর্তমান সরকার বলছে ‘ইনক্লুসিভনেসের’ কথা। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে ‘ইনক্লুসিভ’ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) হওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। সবাই সবার মতো সমান অধিকার ভোগ করবেন; কোনো ধর্ম বা গোষ্ঠীর প্রতি সরকার পক্ষপাত করবে না; সবাইকে সমান দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবে। আর সেটাই ধর্মনিরপেক্ষতা।
“যারা এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিপক্ষে কথা বলছে, তারা ভারতের মুসলমানদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলছে, তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর ঝুঁকিতে ফেলছে।”
আনু মুহাম্মদ বলেন, “পাহাড়ে কারা জমি দখল করে আছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করলে বোঝা যাবে, পাহাড়ে কেন শান্তি নেই। আদিবাসী বলতে আদিবাসিন্দা নয়। আদিবাসী বলতে একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, যাদের সংস্কৃতি আলাদা। এটা স্বীকার করলে সমস্যা হচ্ছে তাদের ভূমি দখল করা যাবে না।”
রাজনৈতিক দলে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের বয়সসীমা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “চিরদিন নেতৃত্বে থাকার পদ্ধতি থেকে বের হতে হবে। রাজনৈতিক দলের সমস্ত পর্যায়ের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে।
“সব পর্যায়ের মানুষ, নারী-পুরুষ যে দলে থাকবে, সেটাকেই জাতীয় রাজনৈতিক দল বলা উচিত। জুলাই-অগাষ্টের গ্রাফিতিতে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা গ্রাফিতির দেয়ালকেই বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে মনে করছি।”