ভোজ্যতেলের বোতলের দামে যে ছাড় দেওয়া হত, সেটি আর দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। ফলে ক্রেতাদের বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
Published : 19 Jan 2024, 07:43 PM
সরকারের তৎপরতার পর চালের দাম পাইকারিতে কিছুটা কমেছে। তবে খুচরায় দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা বেশি।
মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে নতুন সরকারের অঙ্গীকারের মধ্যে ডাল, ছোলা, চিনি, গরুর মাংসের দাম নতুন করে বেড়েছে।
ভোজ্য তেলও আগের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এর কারণ বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য থেকে ব্যবসায়ীরা যে ছাড় ভোক্তাদের দিতেন, সেটি আর দিচ্ছেন না।
সব মিলিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাজারে গিয়ে ক্রেতার বিরক্তি আরও বেড়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের পর পর চালের দাম হুট করেই কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে যাওয়ার পর খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জোর তৎপরতা শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘দাম যেভাবে চার দিনে বাড়িয়েছেন, সেভাবে চার দিনে কমাবেন।’
বড় করপোরেট কোম্পানির কারণে দাম বাড়ছে- পাইকারি ব্যবসায়ীদের এমন বক্তব্য শুনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, প্রয়োজনে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাজারে গিয়ে ভোক্তাদেরকে চাল কিনতে হয়েছে বাড়তি দরেই। সরকারি সংস্থা টিসিবির ওয়েবসাইট বলছে, আগের সপ্তাহের চেয়ে দুই টাকা বেশি দরে কিনতে হয়েছে।
তবে পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকান মেমার্স মাস্টার এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা জালাল উদ্দিন।
তিনি জানান, দুই দিন আগে তার দোকানে যে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৮ টাকা, সেটি আজ ৬৭ টাকায়, যে নাজিরশাইল ৬৫ ছিল সেটি ৬৩ টাকায় আর যে স্বর্ণা ৪৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি ৪৭ টাকায় নেমেছে।
টিসিবির বাজারদরের হিসাব বলছে শুক্রবার নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল খুরচায় মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকায়, গত সপ্তাহে তা ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা।
পাইজাম ও লতার মতো মাঝারি চালের দাম গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, সেটি এখন ৫২ থেকে ৫৬ টাকা।
স্বর্ণা ও চায়না ইরির দাম এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকা, গত সপ্তাহে তা ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।
তেলের বোতলের ছাড় আর নেই
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারগুলোতে সরকার অনুমোদিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে কিছুটা ছাড়ে রান্নার তেল কিনতে পেরেছে ক্রেতারা। কোম্পানিভেদে লিটারে ৪ থেকে ৬ টাকা আর পাঁচ লিটার বোতলে ২০ থেকে ৩০ টাকা ছাড় পাওয়া যেত। তবে এখন ক্রেতাদেরকে এই টাকাটা দিতে হচ্ছে।
এক লিটার সয়াবিন তেল এখন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে পাওয়া গেছে ১৬৫ টাকায়। পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের, যা গত সপ্তাহে পাওয়া গেছে ৮২০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরে খোলা তেল বিক্রি হয় কেজি হিসেবে। বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, “পামওয়েল আগে বেচতাম ১৩৫ টাকায়, এখন বেচি ১৪০ টাকা কেজিতে।”
সাহ মিরান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, “এক লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা, আগে বেচতাম ১৬৫।”
সয়াবিন তেলের পাইকারি দোকান সোনালী ট্রেডার্সের দোকানী আবুল কাশেম বলেন, “গায়ের রেট আগেরটাই আছে৷ আগে হয়ত একটু বেশি কমাইয়া বেচত, এখন হয়ত গায়ের রেটের কাছাকাছি বেছে, এটাই বিষয়। কোম্পানি এক টাকাও বাড়ায় নাই।”
সোনালী ট্রেডার্স থেকে দরকষাকষি করে জহির উদ্দীন বাবর রূপচাঁদা কোম্পানির ৫ লিটার সয়াবিন তেল কিনলেন ৮৩০ টাকা দিয়ে।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে ৮১০ টাকায়ও কিনেছি। আজ ৮৪০ টাকা চাচ্ছে। পরে ৮৩০ টাকায় দিল। উনি বলতেছে কিনা রেটে দিছে।”
কৃষি মার্কেটে তেল কিনে রাজন সিকদার বলেন, “এ যেন তেলেসমাতি কারবার। বোতলের গায়ের রেট আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। কিন্তু কিনতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশিতে।”
কৃষি মার্কেটের মেসার্স লিজা ট্রেডিংয়ের দোকানি ইমন হোসেন সালাউদ্দিন বলেন, “গায়ের রেট আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে ৫ লিটারের বোতল আনতাম মানভেদে ৭৯০ থেকে ৮০৫ টাকায়। এখন আনি ৮১০ থেকে ৮২০ টাকা দিয়া।”
ডাল-চিনির দামে লাফ
কারওয়ান বাজার সাহ মিরান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, মুগডাল ১৪০ টাকা কেজি থেকে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৯০ থেকে ১১০ টাকা আর চিনির দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।
কৃষি মার্কেটের মেসার্স লিজা ট্রেডিংয়ের দোকানি ইমন হোসেন সালাউদ্দিন বলেন, “চিনির দাম অনেক বাড়ছে। আগে বেচতাম ১৩০ টাকায়, এখন ১৪৫ টাকা কেজি। ছোলা এখন ১১০ টাকা কেজি, আগে ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। মুগডালের দামও কেজিতে ২০ টাকার উপরে বাড়ছে। আগে ছিল ১৪০ টাকা আর এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি।”
একই মার্কেটের জোনাকি স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোশাররফ পাটোয়ারী বলেন, “চিনির ৫০ কেজির বস্তা আগে কিনছি ৬ হাজার ২০০ টাকা দিয়া, এখন কিনে আনলাম ৬ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে। মানে আগে যেই দামে খুচরা বেচতাম এখন সেই দামে পাইকারিও কিনতে পারি না।”
গরুর মাংসের স্বস্তি উধাও
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা গরুর মাংসের বিক্রেতারা ভোট শেষে দাম ৭০০ টাকা করে দিয়েছেন। কোথাও আবার ৭৫০ টাকা চাইতে দেখা গেছে। হাড়ছাড়া মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা হয়েছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮৫০ টাকা।”
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এসে দাম বাড়তি শুনে মো. চাদের কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চান রোজিনা বেগম। বিক্রেতা বলেন, "দাম কি আমরা বাড়াই? আমগো গরু বেশি দামে কিনতে হয়।"
পরে মাংস কেনেননি রোজিনা। তিনি বলেন, “কয়েকটা দিন আগেই তো ৬৫০ টাকায় কিনতাম। এখন লাফ দিয়া ৭০০ টাকা বানাই দিল। এটা কোনো কথা?”
মো. চাঁদ বলেন, "৭০০ টাকার কাছাকাছি আমাদের কি না পড়ে। লস দিয়ে তো আর বিক্রি করতে পারি না।"
আলু পেঁয়াজের ‘দ্বিগুণ দর’
আলুর দাম এখনও ৫০ টাকায়। সবজির দামেও কোনো স্বস্তি নেই ক্রেতার। টিসিবির হিসাব বলছে গত বছরের তুলনায় দাম ৯১ শতাংশ বেশি। নতুন পেঁয়াজের দর এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দাম বেশি ৮৭ থেকে ৯০ শতাংশ।
টমেটোর দামটা কেবল ৫০ এর ঘরে বা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে কমে পাওয়া যাচ্ছে। এই সবজির দামও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
দাম বাড়ছে রসুনেরও। কৃষি মার্কেটে রসুনের দোকানি মনির হোসেন বলেন, “রসুনের ভালই দাম বাড়ছে। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে দাম বাড়ছে।”
তিনি জানান, চীন থেকে আনা রসুনের দাম চড়েছে ২৫০ টাকায়, যা কদিন আগে ছিল ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকা। দেশি রসুনের দামও ২৮০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা।