১৬ বছর পর রিহ্যাবে ভোট: ভেন্যু নিয়ে ‘দুশ্চিন্তা’

২০০৮ সালের পর নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট হয়নি আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সমিতিতে। সদ্য সাবেক কমিটি মেয়াদ শেষেও সমঝোতার ভিত্তিতে এক দশক দায়িত্ব পালন করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2024, 03:51 PM
Updated : 25 Feb 2024, 03:51 PM

১৬ বছর পর নির্বাচিত কমিটি পাচ্ছে দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে সমিতির ৪৭৬ জন সদস্য ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ভোটের ভেন্যু নিয়ে প্রশ্ন আছে।  

নির্বাচনে ঢাকার ২৯টি পরিচালক পদের বিপরীতে ৮৬ জন এবং চট্টগ্রামের তিনটি পরিচালক পদের বিপরীতে রয়েছেন সাতজন প্রার্থী।

নির্বাচনে লড়াই করছে চারটি প্যানেল; সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ‘আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’, সেঞ্চুরি রিয়্যালটির চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ‘ডেভেলপারস ফোরাম’, রিহ্যাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলালের নেতৃত্বে ‘নবজাগরণ’ প্যানেল এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্ব ‘জয়ের ধারা’ প্যানেল।

২০০৮ সালের পর নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট হয়নি রিহ্যাবে। সদ্য সাবেক কমিটি মেয়াদ শেষেও সমঝোতার ভিত্তিতে এক দশক দায়িত্ব পালন করেছে।

এই নির্বাচন গত বছরের সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনের কমিশন গঠন এবং ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার কারণে স্থগিত হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংগঠনটির সব ব্যাংক হিসাবও স্থগিত হয়।

পরে গত নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রশাসক পদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌস দায়িত্ব নেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছাদেক আহমেদকে এই নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। বোর্ডের বাকি দুই সদস্য হলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুসরাত আইরিন এবং মোহাম্মদ মশিউর রহমান।

এরপর ৩ ডিসেম্বর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়। প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৫ জানুয়ারি।

কী বলছেন প্রার্থীরা

আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে থাকা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উৎসবমুখর পরিবেশ আছে। ইনশাআল্লাহ একটা ভালো নির্বাচন হবে। আশা করি আমাদের প্যানেল জয়যুক্ত হবে।”

ডেভেলপারস ফোরামের নেতৃত্ব থাকা এম জি আর নাসির মজুমদার বলেন, “ভেন্যুটা একটা পাঁচ তারকা হোটেলে হলে ভালো হত। এখন নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করলে আজকের দিনটাও সময় আছে। তাহলে আরও ভালো হয়।”  

কেন ভেন্যু পরিবর্তন প্রত্যাশা করছেন?- এই প্রশ্নে নাসির বলেন, “পাঁচ তারকা হোটেলে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমে আসত। কেআইবি এমন একটা জায়গা, সেটি একটা মোড়ের মধ্যে। ওখানে গাড়ি ঘুরিয়ে দিলে ভোটাররা আর যাবে না। রিহ্যাবে এমনিতেই ১৫ বছর নির্বাচন হয় না। ভোটাররা যদি না যায়, নির্বাচনের রেজাল্টটা কী হবে? "

নবজাগরণ প্যানেলের নজরুল ইসলাম দুলাল বলেন, “ওটা একটা ঘিঞ্জি এলাকা। আমাদের অধিকাংশ ভোটার গাড়ি নিয়ে আসবে। এটা একটা সমস্যা।”

নির্বাচনি অঙ্গীকার নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “রিহ্যাবের একটা ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট আছে, সেটাকে আরও জোরদার করব। ব্যবসার পরিবেশ ভালো করার চেষ্টা করব। ট্যাক্স, ভ্যাটের পরিমাণ নিয়ে সমস্যা আছে, সেগুলোও সরকারের সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করব।”

জয়ের ধারা প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা ইন্তেখাবুল হামিদ অবশ্য ভেন্যু নিয়ে ভাবছেন না। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি আমার কাছে ভালোই মনে হচ্ছে। একটা সময় ছিল, বারবার ভেন্যু চেঞ্জ করার চিন্তাভাবনা ছিল। যেটা এখন একটা জায়গায় স্থির হয়েছে। এটা ভালো। প্রতিদিন যদি ভেন্যু চেঞ্জ হয়, তাহলে তো মনে হয় কোন একটা বাইরের শক্তি কাজ করে হয়তবা।”

ইন্তেখাব সম্পর্কে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভাই।

তার বিবেচনায়, নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আরো কিছু থাকতে পারত। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বেশ সুন্দরভাবে সব কিছু গুছিয়ে একটা নোটিস দিয়ে দিয়েছে, এটা ভালো। আরেকটা জিনিস করতে পারত, প্রার্থীদেরকে ডেকে একটা ডেমনস্ট্রেশন দিতে পারত যে, ‘আমরা এই-এই জিনিস করতে যাচ্ছি। আপনাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা।

“এই ধরনের মতবিনিময়টা করেনি। গত নির্বাচনে হোটেলে শেরাটনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মতবিনিময় সভার আয়োজন করে দেখানো হয়েছিল কীভাবে ভোট দিতে হবে।”

প্রার্থীদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে রিহ্যাব প্রশাসক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কীভাবে নির্বাচন হবে না হবে সেটার একটা নির্দেশনা আমরা দিয়ে দিয়েছি। ভোট কীভাবে হয়, এটা তো সবাই জানে। উনারা একটা প্যানেল পরিচিতি চাচ্ছিলেন। ভোটের প্রার্থী ৯৩ জন। এত বিশাল সংখ্যক লোকজন নিয়ে বসার আসলে আমাদের সুযোগ নেই।”

ভেন্যু পরিবর্তনের আর সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। পরের কর্ম দিবসেই নির্বাচন।”