সম্প্রতি রাজধানীর নিকুঞ্জ-১ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি প্রধান কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তাদের হিসাব পর্যালোচনা করে কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায় বলে নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (ভ্যাট) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানিয়েছেন।
২০১৭ সাল থেকে রেস্তোরাঁ দুটি কর ফাঁকি দিয়ে আসছিল জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেওয়া হিসাব এবং অভিযান থেকে পাওয়া কাগজপত্র ক্রস চেক করে দেখা হচ্ছে। এবিষয়ে রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের কাছে শিগগির মামলা করা হবে।”
রেস্তোরাঁ দুটো ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থিত হওয়ায় সারা দিন জমজমাট থাকে। দূরপাল্লার অনেক বাস এখানে যাত্রাবিরতি করে। যাত্রীদের সেখানে খাবার পরিবেশন করা হয়।
বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ) এসআর গ্রুপের মালিক। রেস্তোরাঁ ছাড়াও পরিবহন, টেলি যোগাযোগ, লজিস্টিকস, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গার্মেন্টসের সহযোগী পণ্যসহ বিভিন্ন খাতে তার ব্যবসা রয়েছে।
কিন্তু জব্দকৃত কাগজে দেখা যায়, ওই সময়ের মধ্যে প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ১২৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফুড ভিলেজ প্লাস এই সময়ে বিক্রি গোপন করেছে ১০০ কোটি টাকা। এখানে ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ বর্তায় ৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে একই মালিকানাধীন শেরপুরের ফুড ভিলেজ একই সময়ে তিন বছর পাঁচ মাসে ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি দেখিয়েছে ২৩ কোটি ৮৮ কোটি টাকা। এতে ভ্যাট দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
কিন্তু ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানে এ সময়ে ফুড ভিলেজ লিমিটেডের প্রকৃত বিক্রি হয়েছে ১২২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৮ কোটি ৯৩ কোটি টাকা। এতে সুদ আরোপযোগ্য হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
দুটো রেস্তোরাঁ প্রকৃত বিক্রি গোপন করেছে মোট ১৯৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ভ্যাট রিটার্নে এসআর গ্রুপ প্রায় ৭২ শতাংশ তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
গোপন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এসআর গ্রুপের হেড অফিস বাড়ি ৪৬, লেক রোড, নিকুঞ্জ ১ এ অভিযান পরিচালনা করে এবং অফিসের কাগজপত্র ও কম্পিউটারের তথ্যাদি জব্দ করে ভ্যাট গোয়েন্দারা।
এই অভিযানে উক্ত দুটো রেস্তোরাঁ ছাড়াও দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, সুং ফুড গার্ডেন, এসআর ট্রাভেল ও পার্সেলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রও আটক করা হয়। এসব তথ্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট রিটার্নের সাথে যাচাই করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
উক্ত অভিযানটি পরিচালনা করেন সংস্থার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও ফেরদৌসী মাহবুব।
কর ফাঁকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআর গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের হিসাব-নিকাশ করে প্রাপ্য ভ্যাট পরিশোধ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য কোনো নোটিস না করে হঠাৎ অভিযান চালানো হয়েছে।
মামলা হলে বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে বলেও তিনি জানান।