রোববার বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটির শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে।
গত বুধবার এই কর্মকর্তাদের ছাঁটাইয়ের নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেই বলা হয়েছিল, রোববার থেকে তাদের চাকরি নেই।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য রোববার রাতে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ (রুমী) আলীকে ফোন দিলে তিনি ধরেননি।
তখন ছাঁটাইয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাওয়ার কথা জানিয়ে এসএমএস করার পর তিনি ফিরতি এসএমএসে এ বিষয়ে কথা বলতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এরপর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি।
কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতির নোটিসে ব্যয় কমিয়ে আনাকে এই ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
নোটিসে বলা হয়েছে, “এবি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপনাকে চাকুরিচ্যুত বা ছাঁটাই করার (টার্মিনেট) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ১২ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
“আপনার সকল বকেয়া এবং পাওনা পরিশোধ করা হবে। এবি ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সকলকে তিন মাসের বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।”
“ভবিষ্যতে ব্যাংক টিকিয়ে রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাংক আর অতিরিক্ত খরচ বহন করতে পারছে না।”
“এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিলে তার জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন,” বলা হয় নোটিসে।
চাকরিচ্যুত একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সবমিলিয়ে রোববার ১২১ কর্মকর্তার ছাঁটাইয়ের আদেশ কার্যকর হয়েছে।
মহামারীকালে চাকরি হারিয়ে তাদের সবার মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে।
ছাঁটাই হওয়া একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মহামারীকালে আমাদের কী হবে! পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব?”
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বিভিন্ন সময়ে এই ব্যাংকের উদ্যোক্তা-মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেপুটে খেয়েছে। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। সেই টাকা ফেরত আনার কোনো ব্যবস্থা না করে আমাদের ছাঁটাই করা হলো।”
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেখিয়ে এর আগে মে ও জুন মাসের কর্মকর্তাদের বেতন ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয় এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং সেবার জন্য রয়েছে আলাদা ইউনিট। ব্যাংকের সব ধরনের সেবা পণ্য রয়েছে এবি ব্যাংকের।
বর্তমানে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০।
দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের দুর্নীতি-অনিয়মের কারণেই ব্যাংকটি ডুবতে বসেছে।
গত ২৩ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ব্যাংকিং খাতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিলেন।
তাতে দেখা যায়, দেশের সব ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে এবি ব্যাংকের পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ঋণ নিয়েছেন। তাদের ঋণের স্থিতি ৯০৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।