মুনাফা কমেছে বিমানের

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস টানা তৃতীয় বছরের মত লাভের ধারা ধরে রাখতে পারলেও গত অর্থবছর তাদের নিট মুনাফার পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2017, 12:55 PM
Updated : 20 Dec 2017, 02:25 PM

২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর শোধ করে বিমানের নিট মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। আগের অর্থ বছর এর পরিমাণ ছিল ২৩৫ কোটি টাকা; ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ছিল ৩২৪ কোটি টাকা। 

বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইনামুল বারীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার বলাকায় কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের জিএম শাকিল মেরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছর করপূর্ব মুনাফা হয়েছে ১৫১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৪ কোটি টাকা বেশি। তবে পুরনো কর পরিশোধের কারণে এবার নিট মুনাফা কমেছে। 

অব্যাহত লোকসানের চক্র থেকে বের করে আনতে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিমান পরিবহন সংস্থাকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়; পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বোর্ডের হাতে।

এরপর দুই বছর বিমান লাভের মুখ দেখলেও ২০০৯-১০ থেকে টানা পাঁচ অর্থবছরে লোকসান হয় ১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন পর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিমান আবার লাভের ধারায় ফেরে।

এরপর গত তিন অর্থবছরে মোট ৬০৬ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছে বলে জানানো হয় বিমানের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সেখানে বলা হয়, গত অর্থ-বছরে বিমান রাজস্ব হিসেবে ৩৮১ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে, যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৭৭ কোটি টাকা বেশি।

শাকিল মেরাজ বলেন, “বিশ্ব বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম বেশি। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আছে। এশিয়ার এভিয়েশন মার্কেটে এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে ভাড়া নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। তারপরও বিমানের এই মুনাফা অর্জন নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা।”

২০০৮ সালে উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২.১ বিলিয়ন ডলারে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করেছিল বিমান। তার মধ্যে ছয়টি উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে এবং তা মুনাফা অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। 

এছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কানাডীয় কোম্পানি বোম্বার্ডিয়ার থেকে ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে তিনটি উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমান ২৩ লাখ ৫১ হাজার যাত্রী বহন করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১.৪ শতাংশ বেশি।

আর গত অর্থবছর ৩৩ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করেছে বিমানের কার্গো উড়োজাহাজ, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম।

যুক্তরাজ্য সরকার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালে আকাশ পথে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এ খাতে বিমানের আয় কমেছে বলে শাকিল মেরাজ জানান। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিজস্ব ১৬ হাজার ৪৭৩টি ফ্লাইট এবং ২৬টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের ৪৮ হাজার ৫০২টি ফ্লাইটের ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়েছে। 

বর্তমান বিমানের বহরে রয়েছে নিজস্ব চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ।

এছাড়া ভাড়ায় আনা হয়েছে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, একটি এয়ারবাস এ-৩৩০ এবং স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যের জন্য দুটি ড্যাস ৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ।

আগামী দুই বছরে চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার যোগ হচ্ছে বিমান বহরে। সেই সঙ্গে চীনের গুয়াংজু, শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং মালদ্বীপের মালেতে ফ্লাইট চালানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া যাত্রী সেবার মান বাড়াতেও বিমান কাজ করছে জানিয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, চলতি অর্থ বছরেও মুনাফার ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা করছেন।