মুক্তিযোদ্ধারা পাবেন বিজয় দিবসের ভাতা

জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যেককে বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা করে বিশেষ ভাতা দেবে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2018, 09:44 AM
Updated : 7 June 2018, 04:42 PM

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই ভাতা চালুর ঘোষণা দেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি বার্ষিক দুই হাজার টাকা করে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুর কথা বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরেন মুহিত।

অস্বচ্ছল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা অথবা নাতি-নাতনীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাজেটে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলেন তিনি।

দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন বাজেটে রেকর্ড ৬৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আমরা সামাজিক সুরক্ষাভুক্ত বিভিন্ন ভাতার হার ও পরিধির যৌক্তিক সম্প্রসারণ করেছি।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৭৩.২ কোটি টাকা। আগামী ২০১৮‑১৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ৬৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এই অর্থ জিডিপির ২.৫৫ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১৩.৯২ শতাংশ।

২০০৫ সালে যেখানে দেশে ১৩ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করত, ২০১৬ সালে তা ২৮.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে তথ্য দেন অর্থমন্ত্রী।  

মুক্তিযোদ্ধাদের এক কর্মসূচি (ফাইল ছবি)

এবারের বাজেটে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখে উন্নীত এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৪ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা সোয়া ৮ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ করার প্রস্তাব করেছেন মুহিত।

প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা হতে ৮৫০ টাকায় বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার করার প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।

হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেন মুহিত।

বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬৪ হাজার এবং এদের মধ্যে বিশেষ ভাতা ভোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার এবং শিক্ষা উপবৃত্তির সংখ্যা ১১ হাজার থেকে ১৯ হাজারে উন্নীত করার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারে উন্নীত, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা এবং ভাতার মেয়াদ ২ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর নির্ধারণ করে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ থেকে ৭ লাখে উন্নীতের বিষয়ও বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা হতে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতা প্রদানের মেয়াদ ২ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর নির্ধারণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ থেকে আড়াই লাখে উন্নীতের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার হিসেবে মোট ৪০ হাজার বৃদ্ধি করে ভিজিডি কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজার করার প্রস্তাব করেন মুহিত।

তিনি বলেন, দ্বৈততা পরিহার ও স্বচ্ছতা আনতে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের সুবিধাভোগীদের তথ্য নিয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে।

এ কার্যক্রমের আওতাধীন অর্ধকোটি সুবিধাভোগীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব বা মোবাইলে ভাতার টাকা নিয়মিত পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।