তুরাগে ফিরছে প্রাণের ছোঁয়া

রবিউন নাহার তমা
Published : 14 Oct 2019, 11:31 AM
Updated : 14 Oct 2019, 11:31 AM

পানি দূষণের ব্যাপারটা তুলনায় নিয়ে এলে বুড়িগঙ্গার পরেই আসবে তুরাগ নদীর নাম । বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে এই নদী দেখে বিশ্বাসই করতে পারতাম না যে এখানে স্কুলে থাকতে দলবল ধরে গোসল করেছি; তীরের স্বছ পানিতে বারবার গামছা দিয়ে ছোট মাছ ধরারও চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ ২০০৪ সালের শেষ দিকে খালাতো বোনের শ্বশুরবাড়ি বনগাঁওতে গিয়ে নদীতে নেমেছি । ট্রাকের চাকা ভাসিয়ে ভাইবোনেরা মিলে নদীতে ঝাঁপিয়েছি ।

এরপর বছর পেরিয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণ। শৈশবের সেই তুরাগ নদীতে নামাতো দূরে থাক, দুর্গন্ধে আশেপাশেও যাওয়া যেত না। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে পরিবার নিয়ে নৌ ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা হল। যথারীতি বিকেল ৪টার দিকে বের হলাম। নদীর কাছে এসে নাকমুখ চেপে নৌকায় উঠলাম। অনেকটা দূর এগোনোর পর অবশেষে মাঝ নদীতে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

কয়েকদিন আগে নৌ ভ্রমণে বের হলাম। ইচ্ছে ছিল মূলত কাউন্দিয়ার ওদিকটাতে যাবো কাশফুল দেখতে । অটোতেও যাওয়া যেত, কিন্তু আমরা নদী পথকেই বেছে নিলাম। মনে হল ভুল করিনি। কি আশ্চর্য! এটা সেই হারিয়ে যাওয়া নদী যেন ফিরে আসার পাঁয়তারা করছে।

শুনেছিলাম তুরাগ তীরের অবৈধ স্থাপনা নাকি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। অনেকের ৩০-৩৫ বছর পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। শুনে বেশ খারাপ লাগতো । কিন্তু ওই যে বলে- বৃহৎ স্বার্থের জন্য কিছু তো জলাঞ্জলি দিতেই হবে। প্রথমেই সরকারকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। কাজটা কিন্তু সহজ ছিল না। অনেক বাধা ছিল, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের পাশপাশি নেতাদেরও অপছন্দকে ঠেলে দিয়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে সবার আগে স্থান দিতে হয়েছে। যার ফলাফল এর মধ্যেই পাওয়া শুরু হয়েছে । নদীর প্রশস্থতার সাথে বাড়তে শুরু করছে নাব্যতাও। আর সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে ব্যাপারটা তা হল মন জুড়ানো বাতাস। বাতসের অক্সিজেনটাকেও বেশ শুদ্ধ মনে হল।

এই উচ্ছেদ অভিযানটার দরকারটা অনেক আগেই ছিল। দেরিতে হলেও এটা যে হয়েছে সেটাই একটা বিশাল ব্যাপার। এখন নদীকে বাঁচানোর বাকি দায়িত্ত্ব আমাদের। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা, পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনে সুব্যবস্থাপনা, নতুন করে নদীর কাছাকাছি ইটের ভাটা বা কলকারখানা স্থাপন থেকে বিরত থাকা, সর্বোপরি পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতাই ফিরিয়ে আনতে পারে প্রায় খালে রুপান্তরিত হওয়া আমাদের শৈশবের সেই তুরাগ নদীকে।