সময় থাকতে প্রবীণদের নিয়ে ভাবার পরামর্শ জাতিসংঘের

১১ দিনের বাংলাদেশ সফরকালে দুই শতাধিক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গেও মতবিনিময় করেন জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ক্লাউডিয়া মালার।

বয়স্ক ব্যক্তিদের দুর্দশা কমাতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ক্লাউডিয়া মালার।

বুধবার ১১ দিনের বাংলাদেশ সফরের শেষ দিন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের বয়স্ক ব্যক্তিদের সব ধরনের মানবাধিকার ভোগ বিষয় নিয়ে কাজ করা এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “বয়স্ক ব্যক্তিদের বিষয়ে বৈষম্য দূর করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”

গত ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরে এসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, প্রবীণদের নিয়ে কাজ করে এমন অংশীজন এবং দুই শতাধিক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করেন ক্লাউডিয়া মালার।

তিনি এ সফরের অনুসন্ধান এবং সুপারিশসহ একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা দেবেন।

২০১৩ সালে প্রবীণদের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় নীতি প্রণয়নকে সাধুবাদ জানালেও বাস্তবায়ন সেভাবে না হওয়ার কথা তুলে ধরে ক্লাউডিয়া বলেন, “বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য জাতীয় নীতি গ্রহণের ৯ বছরের বেশি সময় পরেও এটির বেশিরভাগ অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম অকার্যকর ও উপেক্ষায় পর্যবসিত হওয়ার বিষয়টি সমস্যাজনক।”

বাংলাদেশ সরকারের চলমান জলবায়ু ইস্যু, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে ব্যাপক অবদান রাখার বিষয়টি স্বীকৃতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রবীণ ব্যক্তিদের অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি যেসব প্রবীণের সঙ্গে দেখা করেছি তাদের বেশিরভাগই প্রায়শই পরিবার ও সমাজের জন্য যে বোঝা এটি প্রকাশ করেছেন।”

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বাংলাদেশের সমাজে যদিও বয়স্ক আত্মীয়দের সম্মান ও যত্ন নেওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে কিন্তু তাদের 'নির্দিষ্ট চাহিদা' সহজেই উপেক্ষা করা হয়।

এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা শ্রমবাজারেও  উপেক্ষার সম্মুখীন হন বলে জানান ক্লাউডিয়া মালার।

দেশের বয়স্ক ভাতার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে এতে আরও তহবিল সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। তবে এই ভাতা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সেই সঙ্গে প্রবীণদের বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্যসেবার অভাব থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “শহুরে এলাকায় বস্তিতে বসবাসকারী, রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারী, শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে কর্মরত, সেইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের সম্মুখীন হওয়া ও সুরক্ষাবিহীন পরিস্থিতিতে বসবাসকারী বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।”

২০২০ সালের মে মাসে জাতিসংঘের হিউম্যান রাটইস কাউন্সিল কর্তৃক বয়স্ক ব্যক্তিদের সব ধরনের মানবাধিকার ভোগ বিষয়ের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত হন অস্ট্রিয়ার নাগরিক ক্লাউডিয়া মালার।