ডলফিন বাঁচাতে ইলিশের মত উদ্যোগ চান পরিবেশমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবসে এ প্রাণী রক্ষায় নদী বাঁচানোরও তাগিদ এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2022, 05:24 AM
Updated : 25 Oct 2022, 05:24 AM

মিঠাপানির জলজ প্রাণী ডলফিন ও শুশুক সংরক্ষণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

সেইসাথে ডলফিন সংরক্ষণে ইলিশ সংরক্ষণের মত করে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

সোমবার 'আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস-২০২২' উপলক্ষে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত সভায় মন্ত্রীর এ আহ্বান আসে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘শুশুক ডলফিন রক্ষা করি, জলজ প্রতিবেশ ভাল রাখি’।

মন্ত্রী বলেন, “আমরা দেখছি, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৎস্যজীবীদের জালে আটকা পড়ে অনেক ডলফিন মারা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।

"ইলিশ সংরক্ষণের মত করে ডলফিন সংরক্ষণের ব্যাপারেও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আবার নৌযান যখন নদীতে চলে তখনও ডলফিন সংকটে পড়ে। তাই নৌযানগুলো যেন নিয়ম মেনে চলে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে আমরা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চাই। দুই মন্ত্রণালয়কেই আমরা এ ব্যাপারে চিঠি দেব।"

এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, " সরকার ডলফিন এ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করেছে এবং নয়টি ডলফিন অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। সুন্দরবন এলাকায় সাতটি ডলফিন কনজারভেশন দল গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বন কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সুফল প্রকল্পের আওতায় ডলফিন সংরক্ষণ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।"

সরকারের কার্যক্রমের ফলে সুন্দরবনে ডলফিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে 'বৃদ্ধি' পেয়েছে বলেও তথ্য দেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্য– ঢাংমারী, দুধমুখী ও চাঁদপাইতে ডলফিন বৃদ্ধির হার ৫৫ শতাংশ, যা দেশের ডলফিন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। "

তবে মিঠা পানির ডলফিন সংরক্ষণের কাজ শুধু সরকার, বন বিভাগ বা কোনো সংস্থার একার পক্ষে করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন পরিবেশমন্ত্রী।

তিনি বলেন, "সকলের প্রতি আমাদের দেশের ডলফিনসমূহ রক্ষার অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।"

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ ও অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, আইইউসিএন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন বক্তব্য দেন।

উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, "ডলফিন খুবই নিরীহ একটি প্রাণী। মিঠাপানির ডলফিন বা শুশুক উপকূল এবং বড় নদীতে থাকে বলে জেলেদের জালে এরা বেশি আটকায়। তাই ঢাকায় বসে ডলফিন নিয়ে আলোচনার চেয়ে প্রান্তিক এলাকায় যাদের সাথে এদের বেশি দেখা হয় এবং যাদের হাতে এই নিরীহ প্রাণিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের নিয়ে বেশি বেশি কার্যক্রম চালিয়ে ডলফিন রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ ।

রেজাউল করিম বলেন, "আমাদের মেঘনা, পশুর নদীসহ ৭২০ কিলোমিটার এলাকায় আমরা গাঙ্গেয়, ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন দেখতে পাই। কিন্তু জেলেদের জালে, নৌযানের আঘাতে বা পানিতে বিষ দেয়ার কারণে ডলফিন বিপন্ন। এরা মানুষের বন্ধু, জলজ ভারসাম্য রক্ষা করে...ডলফিন রক্ষায় কাজ করতে হবে।

শুশুক এবং ডলফিনকে জলজ পরিবেশের 'দিক নির্দেশক' বর্ণনা করে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, "শুশুক যে মাছ নয়, এটিই আমাদের নদী ও উপকূলীয় এলাকার অনেক মানুষ জানে না।…  নদীর লবণাক্ততা বাড়ছে কি না তা আমরা ডলফিনের চলাচল দেখে বুঝতে পারি। আশির দশকে তুরাগ-বালু নদীতেও ডলফিন দেখা যেত। কিন্তু শিল্পায়ন ও দূষণের কারণে এখন আর দেখা যায় না।"

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী রক্ষায় নদী বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

 তিনি বলেন, "বিভিন্ন দেশে শিল্পায়নের যে বিরূপ প্রভাব প্রতিবেশের উপর পড়েছে, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ঢাকার পাশে শিল্পায়ন ও দূষণে নদীগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন মোংলা, পশুরের দিকেও শিল্পায়ন বেড়েছে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব, ডলফিনসহ অন্যান্য প্রাণী রক্ষার পাশাপাশি তাদের বাসস্থান অর্থাৎ আমাদের নদীগুলো রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের মাধ্যমে যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়।"