জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস চাই না: শেখ হাসিনা

খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা যুব সমাজ ও ছেলেমেয়েদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে, বলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2022, 04:07 PM
Updated : 23 Nov 2022, 04:07 PM

খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা যুব সমাজকে পথ দেখায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পরিবর্তে শান্তি ও প্রগতিতে আস্থা রাখার কথা বলেছেন।

এজন্য শিক্ষা, খেলা ও সাংস্কৃতি চর্চায় সরকারের পৃষ্ঠাপোষকতার কথা তুলে ধরেছেন।

বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের সমাপনী ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মাদক, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস চাই না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। উন্নতিতে এবং প্রগতিতে বিশ্বাস করি। আমি জানি, শিক্ষাদীক্ষা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার মত বিষয়গুলোয় সবসময় সরকারের পৃষ্ঠাপোষকতা লাগে, পৃষ্ঠাপোষকতা ছাড়া এগুলো কখনও বিকশিত হয় না।“

শিশু বা কিশোর বয়স থেকে খেলাধুলা বেশি করলে মন বড় হবে, শরীর ভালো থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এই যে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য একের সঙ্গে অপরের যে প্রতিযোগিতা এই প্রতিযোগিতাই আমাদের যুব সমাজ ও ছেলেমেয়েদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে, নিজেদেরও আত্মশুদ্ধি হবে এবং তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে।“

ঢাকায় বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার বিতরণের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে প্রাইমারি থেকে যে খেলাধুলা শুরু হয়েছে সেখান থেকে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আমি মনে করি, এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই একদিন আমরা বিশ্বে খেলাধুলায় উন্নত হতে পারব।“

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “যদিও বিশ্বকাপ হচ্ছে (বিশ্বকাপ ফুটবল) আমাদের কোনো অবস্থানই নাই।“

‘বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা বিশ্বকাপ আসরে কবে খেলবে’, বিশ্বকাপের খেলা টেলিভিশনে দেখার সময় তিনি এমনটিই ভাবেন বলে অনুষ্ঠানে জানান।

দেশের ১২৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৫০ জন মেয়েসহ প্রায় ৬ হাজার ৯৫০ জন তৃতীয়বারের মত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল, বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি ও দাবাসহ ১২টি ইভেন্টে সেরাদের দেওয়া হয় ৭২০টি পদক। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মেয়েরা সাফ গেমস, এশিয়ান গেমসসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে, ক্রিকেটে পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।”

তার আশা ছেলেরাও একদিন পারবে। সেজন্য তার সরকার আট বিভাগে বিকেএসপির শাখা করছে, যাতে সব ইভেন্টে খেলোয়াড়রা উৎকর্ষতা অর্জন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ পুণর্গঠনকালে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রশিক্ষণের জন্য সে সময় জার্মানি, ভারতসহ অন্যান্য দেশে খেলোয়াড় পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনেন।
তার সরকারও খেলাধুলার বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে এবং আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সীমিত সুযোগের মধ্যেও সরকারের এক্ষেত্রে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং সীমিত সুযোগের মধ্যেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট ভাল করছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে যখন দেশে ফেরেন তখন থেকেই তিনি এবং তার দল আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টা খেলাধুলা এবং ক্রীড়া জগতকে উত্তমরূপে গড়ে তোলা বলে জানান তিনি।

সরকার গঠনের পর থেকেই তার সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তিনি এমন একটা পরিবারে জন্মেছেন যেটি ক্রীড়া অন্তপ্রাণ পরিবার। তার দাদা ফুটবলার ও দাদার ছোট ভাই ফুটবলার ছিলেন, বাবা বঙ্গবন্ধুও ফুটবল খেলতেন। তার দাদা যখন অফিসার্স টিমের ক্যাপ্টেন তখন তার বাবা ছিলেন ছাত্রদের ক্যাপ্টেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কাছেই আমরা শুনেছি একদিকে বাবার টিম অপর দিকে ছেলের টিমের খেলা হত। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে খুব চমৎকারভাবে সেকথা লিখে গেছেন।“

তার দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালও খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

খেলাধুলার পৃষ্ঠাপোষকতায় তার সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, খেলাধুলার সবসময় সবাই যেন বেশি বেশি অংশ নিতে পারে সে লক্ষ্যেই এগুলো করা।

দেশের প্রতিবন্ধীরাও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং ভালো ফল বয়ে আনছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রনালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন।