ঢাকার উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ক্রেইন থেকে গার্ডার পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এখন মানছেন, ওই এলাকায় এ প্রকল্প কতটা বাস্তবসম্মত, সেই ‘ভাবনায় ঘাটতি’ ছিল।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের যে অংশে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে অংশের ঠিকাদার চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনকে (সিজিজিসি) আর কোনো কাজ দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, গত ১৫ অগাস্ট যখন ওই দুর্ঘটনা হল, তখন প্রকল্পের কাজ ৭৯% শেষ।
“যেহেতু ২০% কাজ বাকি, এরা এটা শেষ করুক। কিন্তু এদেরকে বাংলাদেশে আর কোনো কাজ দেওয়া হবে না।”
গত ১৫ অগাস্ট বিকালে ঢাকার উত্তরার জসীম উদ্দীন সড়কের মাথায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে ক্রেইন দিয়ে গার্ডার তোলার সময় তা একটি প্রাইভেটকারের উপর পড়ে। এতে একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন। আহত হন গাড়িতে থাকা আরও দুজন।
ওই ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও চীনা ঠিকাদারের গাফিলতিসহ ১২টি কারণের কথা বলা হয়।
তদন্তের পর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত রিপোর্টের ভিক্তিতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ব্যবস্থা এইটুকু নেওয়া হয়েছে।
“সেই অবস্থায এটা ঠিক করা হয়েছে, বাকি কাজটা, দেশের সংকট, টাকা পয়সা সব বিবেচনায় নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে হলে আবারও কয়েক বছরের বিষয়।”
উত্তরায় ঢাকার প্রবেশ পথে দীর্ঘ যানজট নিরসনে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আজকের মিটিংয়ের ফোকাস ছিল গাজীপুর। বাংলাদেশের আর কোনো জায়গায় এই সমস্যা নেই। আমি মিটিং করে বলেছি, যে কোনো মূল্যে গাজীপুর ঠিক করতে হবে।
“সেটা নিয়ে আমি ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। শুধু একটা প্রকল্প আমাদের গলার কাঁটা হয়েছে। এটা গাজীপুর বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প। এটা খুব চিন্তা ভাবনা করা উচিৎ ছিল যে গাজীপুরের রাস্তার অবস্থা ড্রেনেজ সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল।“
তিনি বলেন, “সেখানে এই প্রকল্প কতটা বাস্তবসম্মত এই ভাবনার ঘাটতি ছিল। যে কারণে আমি বিশ্ব ব্যাংকে না করে দিয়েছি মহাখালী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এক্সটেনশনের (বর্ধিত) কথা।
“তার চেয়ে ভালো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোড সেইফটি প্রোগ্রাম, সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ এটাতে যে ফান্ডিং করবেন সেটা একটু তরান্বিত করেন। বিশ্ব ব্যাংক কাজ করে, কিন্তু ধীরে ধীরে করে। আমাদের এটা খুব জরুরি হয়ে গেছে। আমরা যতই সাফল্য দেখাই না কেন, তার পরে যেসব প্রকল্প এখন অপ্রয়োজনীয়, ঢাউস পরিকল্পনা নেওয়ার ব্যপারে আমি বারণ করেছি।“
সাংবিদকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও কথা বলেন সেতু মন্ত্রী; এ বিষয়ে সরকারের উদ্বেগের কথাও তিনি বলেন।
“রিজার্ভ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। পাকিস্তানে তো রিজার্ভই নেই, শ্রীলংকাতে নেই, নেপালের অবস্থা খারাপ, চলছে না।
তবে সরকার সঙ্কট মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “আমাদের কিছু কিছু বিষয় আছে, খাদ্য নিয়ে কোনো বিপদ আসবে সেই সম্ভাবনা নেই। তার পরেও আমরা আগাম চিন্তা করে রেখেছি। আমাদের এখানে অন্যান্য যে বিষয়, গ্যাসের ব্যাপারে, তেলের (জ্বালানি) ব্যাপারেও... আমরা বিভিন্ন বিষয়ে যারা আসে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। ব্রুনেইয়ের সুলতানের কাছে পজিটিভ কিছু পাওয়া যেতে পারে। তেল ও গ্যাসের ব্যপারে, তাদের কাছেও প্রস্তাব আছে।”