পানির দেশে পানির অভাব

এখানকার বাসিন্দাদের চাওয়া, পানযোগ্য পানির পাশাপাশি যেন ব্যবহারযোগ্য পানিও সহজলভ্য হয়।

মাছুম কামালবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2024, 07:33 PM
Updated : 6 March 2024, 07:33 PM

চারপাশে অনেক জলাশয়; কিন্তু পানযোগ্য সুপেয় পানির তীব্র অভাব। ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেইলর কোলরেজের সেই কবিতার লাইনের মতো, “ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর অ্যানি ড্রপ টু ড্রিংক।” 

দেশের দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পরিস্থিতি যেন এমনই। সেখানে পৌঁছে আল মদিনা নামে একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয় অদ্ভুত অভিজ্ঞতার। ওই অঞ্চলের পানি লবণাক্ত; সে তথ্য জানা ছিল, কিন্তু এতটা লবণাক্ত, সেটা ছিল ধারণাতীত। 

সেই ধারণা আরও পরিষ্কার হল পরদিন। যখন মোংলার চিলা, চাঁদপাই, মিঠেখালি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা হয়। এসব এলাকার বাসিন্দারা লবণাক্ত পানি নিয়ে নানারকম দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। 

চাঁদপাই এলাকার মেছেরশাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন মো. বারিক শেখ। তার বাড়ি চাঁদপাইয়ের দিঘিরকূল এলাকায়। কথায় একটুও আঞ্চলিকতার টান নেই। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে বললেন, “এইদিকে পানিতে প্রধান সমস্যা লবণ। লবণ পানিতে আমাদের জীবনযাত্রা করা খুব কঠিন ব্যাপার।” 

এ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবরানা তাবাসসুম বলল, “আমাদের এখানে খাবার জন্য সাধারণত বৃষ্টির পানি মটকাতে (বড় মাটির পাত্র) ধরে রাখা হয়। সেই পানি শেষ হলে পুকুরের পানি ফিটকিরি দিয়ে পরিষ্কার করে পান করা হত। যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ না করায় এবং সংরক্ষণের উপায় না থাকায় নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ হত। এখন সংরক্ষণের ব্যবস্থাটা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। 

“তবু গোসল করা থেকে শুরু করে অন্য প্রায় সব কাজেই লবণাক্ত পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এই পানি ব্যবহারের জন্য আমার প্রতিবছর খোস-পাঁচড়া ওঠে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো দাগ পড়ে গেছে। পেটে, পিঠে অনেক বেশি হয় এই সমস্যাটা। আর টান দিলেই মাথার চুল সুতার মতো বের হয়ে আসে।” 

ওই স্কুলের একই শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা হোসেন, সুমাইয়া আক্তারসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বললেন লবণাক্ত পানি নিয়ে একই ধরনের সমস্যায় পড়ার কথা। 

স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা কতটা

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলেই মিঠাপানির সব পুকুর এবং অন্যান্য জলাশয়ে লবণ পানি ঢুকতে শুরু করবে। থাকবে বর্ষার শেষ পর্যন্ত। সেই লবণাক্ত পানি ব্যবহারে নানা রকম রোগ ছড়ানোর অভিজ্ঞতা জানান এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা কাকলী মণ্ডল বলেন, “পুকুরের লবণাক্ত পানি খেয়ে আমার ছেলের রক্ত আমাশয় হয়েছিল। প্রায় মরতে বসেছিল সে। সে যাত্রায় অলৌকিকভাবে পোলাটা বেঁচে গেছে। আর এক মাস পরেই লবণাক্ত পানি ঢুকতে শুরু করবে। থাকবে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত। এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা লেগেই থাকে।” 

চাঁদপাই এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, “আমরা যখন ছোট ছিলাম, পুকুরের পানি খেয়ে প্রতি মাসেই ডায়রিয়া হত। আমি ভাবতাম এটা সাধারণ ব্যাপার। এখন বুঝি যে লবণাক্ত পানির জন্যই এই সমস্যা হইত।” 

তিনি বলেন “আমার মা পুকুরের পানিতে নেমে গোসল করে। ফলে এক সময় তার জরায়ুতে ক্ষত হয়ে যায়। ইনফেকশন হয়। পরে এলাকার কয়েকজনসহ আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে চিকিৎসকদের একটি দল এসে আমাদের এখানে ক্যান্সার স্ক্রিনিং পরীক্ষা করেন। 

“সেসময় মোট ১৭৬ জনকে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে দুইজনের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ পাওয়া যায়। ২০ থেকে ২২ জনের টিউমারসহ নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যা শনাক্ত হয়। যার পুরোটাই এই পানির প্রভাবে হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন।” 

ওই এলাকার জেসমিন আক্তার পলি বলেন, “আমাদের এক প্রতিবেশী যে পুকুর থেকে পানি খেত। রান্নার পানিও সেখান থেকেই আসত। তার মেয়ে গর্ভবতী ছিল। ৭ মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তার গর্ভপাত হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার বলেছেন, লবণাক্ত পানির কারণে গর্ভপাত হয়েছে।”

শুধু এটুকুই নয়, এই অঞ্চলে পানির সমস্যার কারণে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে হতাশাজনিত কারণে আত্মহত্যার ঘটনার তথ্যও জানান এলাকাবাসী। 

মোংলার মিঠাখালী ইউনিয়নের নারকেলতলা গুচ্ছগ্রামের হেনা আক্তার নামে এক নারী দীর্ঘদিন চর্মরোগে ভুগেছেন। এক পর্যায়ে সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন তিনি।

তার প্রতিবেশী মনিরা বেগম বলেন, “লবণাক্ত পানি ব্যবহার ও পানের ফলে হেনার অ্যাকজিমা হয়েছিল। দীর্ঘদিন তিনি ভুগেছেন। পরে সইতে না পেরে ২০২১ সালে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।” 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লবণাক্ত পানি ব্যবহার করলে শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। লবণাক্ত পানি শরীরে লাগানো হলে চর্মরোগ হতে পারে। এর ফলে শরীরে ক্ষতের পাশপাশি অস্বস্তি হতে পারে, বার্নিং হতে পারে, অনেক ধরণের এলার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে। আর এই পানি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। এমনকি কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।” 

লবণাক্ততার প্রভাব ফসলের ক্ষেতেও

লবণাক্ত পানির প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের ফসল চাষেও। সেচযোগ্য পানি না থাকায় যেমন আবাদযোগ্য অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়ছে, তেমনি যেসব জমিতে চাষ হয়, সেখানেও ভালো ফলন হয় না। 

খুলনার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের উপকূলবর্তী শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ অঞ্চল লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এর ফলে যে শুধু মানুষের খাবারের পানির চাহিদার সংকট হচ্ছে তা নয়; বরং কৃষির সংকটও এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। ভালো জমিতে যেখানে ফসলের নিবিড়তা জায়গা ভেদে ৪০০ শতাংশও হয়; সেখানে উপকূলে তা মাত্র ১৩৩ শতাংশ।


মোংলার চিলা ইউনিয়নের মধ্য হলদিবুনিয়া ইউপির কাউন্সিলর শিপ্রা হালদার বলেন, “আমাদের বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করি। লবণাক্ত পানির জন্য ভালো হয় না। ধান চাষ তো হয়ই না। সরকার লবণ সহনশীল ধানের বীজ দিয়েছিল আমাদের। ২৫ জন সেই বীজ চাষ করেছে। লবণ পানির জন্য কারও ফলন হয়নি মোটেই।” 

লবণ পানি ফসলি জমিতে ঢোকার কারণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কারণ, ঘের। ঘেরে যে পানি ঢুকে, সেই পানিতে প্রচুর লবণ থাকে এবং পরে বর্ষা মৌসুমে লবণ পানি সবখানে ছড়িয়ে পড়ে।” 

সরকারি তথ্য বাতায়ন অনুসারে, মোংলায় বাগদা চিংড়ির ঘের আছে ৫ হাজার ৪৮০টি। গলদা চিংড়ির ঘের ১ হাজার ৫৮৫টি। ৩৫০টি কাঁকড়ার ঘের। সব মিলিয়ে মোট ঘেরের সংখ্যা ৭ হাজার ৬৪টি। এছাড়া পুকুর রয়েছে ৫ হাজার ৪০টি। 

এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদী থাকার কারণ হিসেবে লবণ পানিকেই দায়ী করা হচ্ছে। 

মোংলা উপজেলার কৃষি তথ্য বাতায়ন বলছে, উপজেলায় এক ফসলি জমি আছে ১০ হাজার ৪০০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৮১০ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমি আছে ৫০ হেক্টর। আবাদযোগ্য অনাবাদী জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরের বেশি। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোংলা উপজেলার আবাদযোগ্য জমির বেশির ভাগই হচ্ছে নদীর পাড়ে, কিছু খালের পাড়ে-পাড়ে আছে। 

“দেখা গেল, যখন বর্ষার সিজনে পানিতে ডুবে যায় এই অঞ্চল, প্রথম বর্ষায়, তখন এই পানি এই অঞ্চলে প্রচুর লবণ নিয়ে আসে। এই পানিটা যদি আমি দিতে যাই, কোন একটা ফসল চাষ করলাম সেখানে, সব পানিই লবণাক্ত। এই কারণে ওখানে চাষ করা সম্ভব হয় না। বলা যায়, সেচযোগ্য পানির অভাব। পানির অভাবের কারণেই ওটা অনাবাদী থাকে।” 

পরিস্থিতি উওরণে উপায় কী?

সরকারি তথ্য বাতায়ন অনুসারে মোংলায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০৩ জন মানুষ বসবাস করেন।  শুধু তারা নন, উপকূলীয় অঞ্চলের বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলাতেও রয়েছে সুপেয় ও নিরাপদ পানির সংকট। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোও এখানে লবণাক্ত পানির আধার হওয়ায় এ অঞ্চলে পানির সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান দক্ষিণের জেলাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট কাটাতে কাজ করছে। 

জনগণের পানির বিষয় দেখভালকারী সরকারি সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক। তিনি মোংলা উপজেলারও অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি। এজন্য এখানে হাউজহোল্ডভিত্তিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম চলমান আছে। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। 

“বাগেরহাটের পাঁচ উপজেলায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ মানুষকে পিএসএফ, রেইন ওয়াটার প্রকল্পের মাধ্যমে পানির চাহিদা মেটানো হয়।” 

অদূর ভবিষ্যতে ওখানে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানিশোধন করে পানির সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয় সমীক্ষা চলছে।” 

মোংলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) কামরুন্নাহার হাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে টিউবওয়েল বসালে আপনি পানি পাবেন না। পুকুর কাটলে পাবেন। কিন্তু একটা পুকুর কাটা অনেক খরচার ব্যাপার। সেটা রক্ষণাবেক্ষণও একটা বিরাট ব্যাপার। সেজন্য আমার এলাকায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য আমাদের এলাকায় একটা প্রকল্প চলমান আছে। যেটার অধীনে ঘরে-ঘরে ধীরে-ধীরে ট্যাংক দেওয়া হচ্ছে। 

“বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য এখানে সরকারের লজিক প্রকল্প (লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-লজিক) চলমান আছে।” 

তিনি জানান, ব্র্র্যাক ছাড়াও সিএসএস, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মতো কিছু এনজিও বিভিন্ন সময়ে মোংলায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা নিয়ে কাজ করেছে। 

ব্র্যাক মোংলা উপজেলায় তাদের জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে বৃষ্টির পানিকে বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগিয়ে সমস্যা দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ প্রকল্পের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, “মোংলা হলো মোস্ট ভালনারেবল এরিয়া। আগে এত লবণাক্ত ছিল না। এখন আরও বেশি লবণাক্ত। মোংলার ছয়টি ইউনিয়নে তিন বছরের জন্য আমরা একটা প্রকল্প চালাচ্ছি। ডেনমার্ক সরকারের অর্থায়নে ২০২২ সালের ৭ জুলাই এই প্রকল্প শুরু হয়। মূলত নিরাপদ পানি সরবরাহ করাই মূল বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সরবরাহ করাই এর মূল উদ্দেশ্য।” 

তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত মোট ৬৭ হাজার ৩০০ জনকে এর আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য ধরে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, “দুইভাবে এই প্রকল্পে কাজ করা হয়েছে। পরিবারকেন্দ্রিক এবং কমিউনিটি বা জনগোষ্ঠিকেন্দ্রিক। বাছাই করা ৪ হাজার ২০০টি পরিবারকে একটি করে ২ হাজার লিটারের পানির ট্যাংক স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বৃষ্টি এলে তারা সেখানে পানি সংরক্ষণ করেন এবং পরে পানের জন্য ব্যবহার করেন। আড়াই হাজার টাকায় পুরো ট্যাংক স্থাপন পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে। এটা ‘কন্ট্রিবিউশন মানি’ অর্থাৎ এই টাকা দিয়ে আবার অন্যদের ট্যাংক স্থাপন করে দিতে সহায়তা করা হবে। 

“আর জনগোষ্ঠী পর্যায়ে এখন পর্যন্ত এরকম ২৬টি জলাধার স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইনস্টিটিউট লেভেলে অর্থাৎ স্কুল, মাদরাসা, মন্দির রয়েছে। এর আওতায় প্রতি শুক্রবার সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত, দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়। প্রতি লিটার পানি ১ টাকা করে।” 

এছাড়া সৌরশক্তিচালিত পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) এর আওতায় দুটি পানি শোধনাগার ও জলাধার স্থাপন করা হয়েছে। পন্ড স্যান্ড ফিল্টার হল-এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে পুকুরের পানি বিশেষ ব্যবস্থায় পানযোগ্য করে তোলা হয়। আবার একই স্থানে রিজার্ভ ট্যাংকের (১০ হাজার লিটার) মাধ্যমে বৃষ্টির পানিও ধরে রাখা হয়। ফলে তুলনামূলক বৃহৎ পরিসরে এগুলো থেকে মানুষ পানি সংরক্ষণ করতে পারেন। যেগুলোর প্রতিটি থেকে ২৫০ জন মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছেন। 

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোংলায় ৫৪টি ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ আছে। যেগুলোর প্রতিটিতে ২৫ থেকে ২৮ জন সদস্য রয়েছে। এই গ্রুপের অধীনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রকল্প এলাকায় স্থাপিত ট্যাংক ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। 

প্রকল্পের সুফলভোগী চাঁদপাইয়ের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের খাওয়ার পানির সংকট অনেকটাই কেটেছে। এর মধ্যে যারা পানি ধারণ করতে পারে না, তারা আবার ৫০ পয়সা করে প্রতি লিটার পানি সংগ্রহ করতে পারেন।” 

মধ্য হলদিবুনিয়ার সবিতা বিশ্বাস বলেন, “আগে পানি আনতি আমার তো যাতি-আসতি প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগতো। সকালে এক কলস-বিকালে এক কলস। গোসল করতি হতো যেখানে-সেখানে। পুকুরের পানি ফিটকারি দিয়ে খাতাম। খালি ভালো লাগতো না। পেটে চুলকানি হত। এখন হতিছে না।” 

মোংলায় সুপেয় পানির অভাব কমলেও এই সুবিধার আওতায় আসা জনসংখ্যা ৫০ শতাংশেরও কম। এখনও ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট নিরসনে বলার মতো তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। 

এখানকার বাসিন্দাদের চাওয়া যেন পানযোগ্য পানির পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য পানিও সহজলভ্য হয়। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।

আরও পড়ুন

Also Read: উপকূলে সুপেয় পানি: তবে তা ‘জলের মত’ সহজ নয়