বিদায়ের সুর বইমেলায়, সঙ্গে বেইলি রোডের শোক

“এমন বেদনার দিনে উৎসবের আনন্দটা হচ্ছে না। অনেকে এসে বই কিনেছেন, উচ্ছ্বাসটা কমে গেছে শোকের কারণে।"

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2024, 05:01 PM
Updated : 1 March 2024, 05:01 PM

একুশে বইমেলায় শুক্রবার ছুটির দিন ছিল কেবলই দিন গণনার। 

আয়োজকদের মধ্যে ছিল গা ছাড়া ভাব; স্টলে স্টলে বিক্রয়কর্মীরাও ছিলেন ক্লান্ত। তার ওপর মেলার মাঠে ছায়া ফেলেছিল বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের শোক। 

সব মিলিয়ে দিনের পুরোটা সময় জনসমাগম ছিল কম। সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়লেও মেলায় যে উচ্ছ্বাস, তা চোখে পড়েনি। 

এবার বইমেলা বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে প্রকাশকদের অনুরোধে মেলার সময় আরো দুদিন বাড়ানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার বেলা ১১টায় দুয়ার খুলে বইমেলার। সকাল থেকে বইমেলায় তেমন লোক সমাগম হয়নি। সন্ধ্যায় যারা এসেছিলেন, তারাও ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। 

কবি অর্বাক আদিত্যের প্রথম কবিতার বই '২৫ সেপ্টেম্বর অঝোরধারায় বৃষ্টি নামুক' প্রকাশ করেছে উত্তরা প্রকাশন। মেলায় বইটির পরিবেশক আগামী। মেলার শেষ সপ্তাহে এসেছে বইটি। 

অর্বাক আদিত্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় বই নিয়ে ফেইসবুকে যে পোস্ট করব, তা নিয়েও অস্বস্তি কাজ করেছে। এমন বেদনার দিনে উৎসবের আনন্দটা হচ্ছে না। অনেকে এসে বই কিনেছেন, উচ্ছ্বাসটা কমে গেছে শোকের কারণে।"

অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবাই শোকে স্তব্ধ। যারা বই কিনতে এসেছিলেন, তাদের সবার মুখে কেমন বিষাদ। বইমেলার শেষভাগে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তা নেই।”

পেন্ডুলাম প্রকাশক রুম্মান তার্শফিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলা হুট করে দুই দিন বাড়ানোর কারণে সবাই তেমন প্রস্তুতও ছিল না। এই দুই দিন কেবলই নিয়ম রক্ষার বা দিন গণনার। কিছু বই হয়ত বেশি বিক্রি হবে, কিন্তু একুশের বইমেলা ভাষার মাসেই শেষ করা উচিত ছিল।"

মেলায় এদিন বিভিন্ন মঞ্চে কোনো আয়োজন ছিল না। তবে শিশুচত্বরে সিসিমপুরের চরিত্র হালুম, টুকটুকি, ইকরি, শিকুরা আনন্দ ছড়িয়েছে শিশুদের মাঝে। মেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকলেও, এদিন ছিল মঞ্চ পর্দায় ঢাকা।

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০টির বেশি। তবে প্রকাশকরা জানান, নতুন বইয়ের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। কারণ সব নতুন বই মেলার তথ্যকেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়নি।

মেলার নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়েছে ২১৯টি বই। এগুলোর মধ্যে- কথাপ্রকাশ এনেছে আফসান চৌধুরীর ‘দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’, অন্যপ্রকাশ এনেছে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর ‘উনিশ’শ একাত্তর’; অবসর এনেছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হাসান হাফিজ, আলী রিয়াজ ও অন্যান্য’র ‘স্কুলদিনের বই পড়া’; গণপ্রকাশ এনেছে পাভেল রহমানের ‘সেইসব দিনগুলি’; গ্রন্থিক এনেছে তোফায়েল আহমেদের ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’; সৌম্য প্রকাশনী এনেছে মেসবাহ কামালের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা’; নান্দিক এনেছে হায়াৎ মামুদের ‘সে এক ঘটনা বটে’ ও পবিত্র সরকারের ‘খেয়ালিমেরিক’।

বর্ধিত সময় অনুযায়ী, মেলার শেষ দিন শনিবার মেলার দুয়ার খুলবে বেলা ১১টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়।

মেলা পরিচালনা কমিটি জানায়, শনিবার বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। সেখানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। 

প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে।