ছিটমহলে আসছে ‘নতুন পরিচয়’, ভোটাধিকার

নাগরিক হয়েও তারা নাগরিক সেবা পাননি দশকের পর দশক; শিক্ষা, চাকরির সুযোগ থেকে হয়েছেন বঞ্চিত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সেই বঞ্চনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে; ছিটমহলের বাসিন্দারাও পেতে যাচ্ছেন ভোটাধিকার, জাতীয় পরিচয়পত্র।  

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2015, 04:37 AM
Updated : 9 June 2015, 04:17 PM

ছিটমহল বিনিময় ও সীমানা পুনঃনির্ধারণের পর ছিটমহলবাসীদের ভোটার তালিকায় আনতে ‘বিশেষ কর্মসূচি’ নেওয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

গত শনিবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে স্থল সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তরের পর সোমবার দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে বিনিময় হওয়া এক চিঠিতে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় শুরুর কথা জানানো হয়।

ছিটমহল বিনিময়ের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর আগে বিচ্ছিন্ন ওই সব ভূমিতে দুই দেশের কর্মকর্তাদের যৌথ পরিদর্শন হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সেরে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। আগামী বছরের শুরুতেই হালনাগাদ কার্যক্রমে ছিটমহলবাসীদের ভোটার করা সম্ভব না হলেও যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে।”

উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের স্থল সীমান্ত নিয়ে এই সমস্যাটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এরপর তা কার্যকরে প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয় ২০১১ সালে।

গত ৭ মে ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ওই চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি হলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর হয়। 

বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, এতে রয়েছে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে শুমারিতে এই তথ্য পাওয়া যায়।

ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর; অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।

আরেক দেশের সীমানার ভেতরে বলে এসব ছিটমহলে হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ বা বিচার- প্রশাসন নেই। মূল ভূখণ্ডে সহজে যাতায়াতের উপায়ও এতোদিন ছিল না।

ফলে ছিটের বাসিন্দাদের ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ ছিল সীমিত। অনেকেই বাংলাদেশি বা ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে লেখাপড়া করলেও ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় চাকরির সুযোগ তাদের হয়নি।

চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে।

এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে।

এ প্রক্রিয়ায় ছিটমহলবাসীরা তাদের জমিতে তাদের ভিটামাটিতে বসবাসের সুযোগ পাবেন; কাউকে স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে না। তবে তাদের জাতীয়তা বদলে যাবে। কেউ আগের জাতীয়তা বজায় রাখতে চাইলে তিনি আগের দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান এই পরিচয়পত্র প্রদান করতেন তাদের অধীনস্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক

বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের পরিচয় নির্ধারণের একমাত্র উপায় ছিল এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের দেওয়া পরিচয়পত্র।এখন তারা পাবেন বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র।

ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে ছিটমহলগুলোর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েও সফল হওয়া যায়নি।তবে এবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

বিশেষ এ কর্মসূচি কবে নাগাদ নেওয়া হবে তা নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত করবে বলে উল্লেখ করেন সচিব।

তিনি বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের পর ওইসব এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে রয়েছে। কোন ছিটমহল কোন নির্বাচনী এলাকায় যুক্ত হবে তা নিশ্চিত করতে হবে। এরপর নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।

২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর কেবল আঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের পাঁচ হাজারের কিছু বেশি ভোটার পাশের ইউনিয়নে গিয়ে তালিকাভুক্ত হন।  তখন তারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পেরেছেন। ওই দুই ছিটমহলে ২০১২ সালেও ভোটার তালিকা হালনাগাদ চলে।