বন্দরে সেই কনটেইনারে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি

ভোজ্যতেল ঘোষণা দিয়ে মাদক আনা হয়েছে সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সিলগালা করা একটি কনটেইনার খুলে ১০৭টি ড্রামের নমুনা পরীক্ষা করে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি।

চট্টগ্রাম ‍ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2015, 03:41 PM
Updated : 8 June 2015, 03:41 PM

সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল এসব নমুনা পরীক্ষার পর এই তথ্য সাংবাদিকদের জানানো হয়।

তবে পরীক্ষাগারে আবারও পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

এই কনটেইনারের একটি বা দুটি ড্রামে ‘তরল কোকেন’ রয়েছে বলে ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা’র কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

বন্দরে তরল পরীক্ষার সময় উপস্থিত অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (এসবি) জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, “বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা কনটেইনারটি শনাক্ত করি।”

সকাল ১১টার দিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও বন্দর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রথম কনটেইনারটি স্ক্যান করা হয়। এতে ভেতরে তরল পদার্খ ভর্তি ড্রামের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর তা খোলা হয়।

পুলিশ, শুল্ক গোয়েন্দা, বন্দর, কাস্টমস, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

নীল রঙের ড্রামের গায়ে লেখা ছিল ‘অ্যাসাইট গিরাসল সানফ্লাওয়ার অয়েল’, ওজন- ১৮৫ কেজি।

পরীক্ষা শেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ১০৭টি ড্রামের মধ্যে কোনোটিতেই কোকেনের নমুনা মেলেনি।

সংগৃহীত নমুনা নৌবাহিনীর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রেও পরীক্ষা করা হয়, তাতেও কোনো মাদক শনাক্ত হয়নি।

তবে পুলিশের সন্দেহ তাতেও না ঘোচার পর ঢাকায় পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বজলুর রহমান বলেন, তারপরও সংগৃহীত নমুনা ঢাকায় কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা পরীক্ষা করা হবে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বলিভিয়া থেকে আমদানি করা সূর্যমুখী ভোজ্যতেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজীকরণ হয় উরুগুয়ের মন্টিভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে গত ১২ মে কনটেইনারটি এসে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেড নামে কনটেইনারটি আমদানি করা হলেও বন্দরে আসার পর এর মালিকানা কেউ দাবি করেনি।

খান জাহান লিমিটেডের মালিক নুর মোহাম্মদ দাবি করেছেন, তার এক কর্মচারী এটি এনেছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কনটেইনারটির লক্ষ্য বাংলাদেশ নয়। কোনো একটি চক্র বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে।

“কারণ আমদানির পর ২৫ দিনেও যে প্রতিষ্ঠানের নামে কনটেইনার এসেছে তারা এটির মালিকানা দাবি করেনি। পাশাপাশি তৃতীয় একটি পক্ষ কনটেইনারটি অন্য একটি দেশে পুনঃরপ্তানির চেষ্টা করে।”

এ কাজে জড়িত এবং তাদের উদ্যোগের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেন মঈনুল খান।

কনটেইনারে বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর অভিযানে নামে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ।

গত কয়েকদিন আমদানিকারক খান জাহান আলী লিমিটেডের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক সোহেলকে আটক করে পুলিশ।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) তানভীর আরাফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মালিকের অজান্তে সোহেল নিজ উদ্যোগে কনটেইনার আনার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

এরপর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে জানতে পারে কোনো ধরণের ঋণপত্র এবং বিল অব এন্ট্রি ছাড়াই কনটেইনারটি আনা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান বলেন, এলসি ছাড়া কনটেইনার আনা সম্ভব যদি আমদানিকারক প্রবাসী বাংলাদেশি হন এবং তার উপার্জিত রেমিটেন্স থাকে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি এর আগে মসলাসহ বিভিন্ন উপকরণ আনলেও কখনও ভোজ্যতেল আমদানি করেনি বলে জানান তিনি।