নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দু’মুখী অবস্থানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বান কি-মুনকে বলেছেন, সংসদে এসে আলোচনার প্রস্তাব দিলে তারা তাকে স্বাগত জানাবেন।
আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সংকট নিরসনে যেকোনো ধরণের সংলাপে প্রস্তুত তারা। পাশাপাশি এটাও জানিয়েছেন, আওয়ামী লগের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। আট ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় বিরোধী দলীয় নেত্রীর সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন তিনি।
আলোচনার বিষয় ছিল, আগামী নির্বাচন, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবকে সংবিধান মেনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বললেও সংসদে বিরোধী দলের যেকোনো প্রস্তাবকে সাদরে গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেন, তিনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এ কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকে সংলাপের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
সংলাপের বিষয়ে সংসদে বিরোধী দলের মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার প্রসঙ্গটিও বান কি-মুনের কাছে তুলে ধরেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের আগে সর্বোচ্চ আদলতের রায়ের বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিবকে শেখ হাসিনা ব্যাখ্যা করে বলেন। তিনি জানান, সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটিতে বিরোধী দলকে ডাকা হলেও তারা আসেনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ওই সংলাপের পর বিকালে বিএনপি প্রতিক্রিয়ায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এর কিছু সময় পরই দলের চেয়ারপারসন বান কি-মুনের ফোন পেয়ে তাকে আশ্বস্ত করেন- আলোচনার বিষয়ে তাদেরও কোনো আপত্তি নেই।
বান কি-মুনকে খালেদা জিয়া বলেন, সংকট সমাধানে সংলাপ কিংবা আলোচনার বিকল্প নেই। বিএনপি যেকোনো ধরনের সংলাপ ও আলোচনার জন্য প্রস্তত রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বান কি-মুন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা বেশিদূর এগোয়নি, যার জন্য শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিকরা।
সংবিধান অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষভাগে বিদায়ী সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। বিদায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আপত্তি বিরোধী দলের। তাদের আশঙ্কা, এতে করে নির্বাচন প্রভাবিত হবে।
আওয়ামী লীগ বলছে, অনির্বাচিত কাউকে রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসানো উচ্চ আদালতের রায়ের চেতনাবিরোধী।
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের এই মুখোমুখী অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সমঝোতা ও সংলাপের তাগিদ এসেছে।