‘বন্ধু’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় খেদ পরিকল্পনামন্ত্রীর

সুনামগঞ্জে রেললাইন স্থাপনের এক প্রকল্পে রুট নিয়ে যাচাইয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ভূমিকায় খেদ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 06:33 PM
Updated : 20 June 2021, 06:38 PM

রোববার ‘পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তর’ নামের একটি ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি তার বন্ধু মোমেনকে নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান।

যোগাযাগ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মাসুম বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকের ওই পেইজটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আমরা পরিচালনা করি।”

পরিকল্পনামন্ত্রী লিখেছেন,

“এটা সত্য যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এবং আমি ৫০ বছরের বন্ধু। কিন্তু জাতীয় পার্টির একজনসহ সুনামগঞ্জের মোট পাঁচজন এমপিকে সমর্থন করে রেলমন্ত্রীর কাছে তিনি যে ডিও দিয়েছেন, তা আমাকে বিস্মিত করেছে। তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) খুব ভাল করে জানেন আমি সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য। সুনামগঞ্জের সাথে রেল যোগাযোগের বিষয়টি আমারও বিষয়। এ বিষয়ে আমি তার চেয়ে ভালো জানি। আমি মনে করি না তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) তার দীর্ঘ বর্ণময় জীবনে কখনও সুনামগঞ্জের মাটিতে পা রেখেছেন। অন্য কোনো পক্ষ নেওয়ার আগে আমার সাথে কথা কথা বলতে পারতেন। আমার দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধু ও মন্ত্রিপরিষদের সহকর্মী বন্ধুর কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না।”

সুনামগঞ্জ জেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে দক্ষিণ ছাতক এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন প্রকল্প নিয়ে দুজনের এই মতদ্বন্দ্ব।

এনিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (রাজনৈতিক) মো. হাসনাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোবিন্দগঞ্জ থেকে দক্ষিণ ছাতক এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত একটি রেললাইনের প্রস্তাব করেছেন এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রস্তাবিত রুটের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের প্রায় ২৫ লাখ লোকের মধ্যে প্রায় ২৩ লাখ লোক ওই রেল যোগাযোগের সুবিধা পাবে। ওই রুটের এখন জরিপ চলছে।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি জাতীয় পার্টির এক এমপিসহ মোট পাঁচজন এমপি ছাতক থেকে আমবাড়ি হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত আরেকটি রুটের জন্য রেলমন্ত্রীর কাছে ডিও (চাহিদাপত্র) প্রস্তাব করেছেন।

“গোবিন্দগঞ্জ থেকে আমবাড়ি হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত যে বিকল্প রুটের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে মাত্র লাখ লোক সুবিধা পাবেন। এছাড়া ওই রুট বৃহত্তর হাওরের উপর দিয়ে। যার কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

এদিকে এর আগে গত ১৪ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক ফেইসবুকে পোস্টে লিখেছিলেন,

“মান্নান আমার বন্ধু, মান্নানের সাথে আমার সম্পর্ক ৫০ বছরের অধিক। আমি এবং মান্নান সুখে–দুঃখে সব সময়ই ছিলাম এবং আছি, ভবিষ্যতেও আমৃত্যু থাকব বলেই আশা করি। দুঃখজনক যে সিলেটের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে দেখলাম আমার এবং মান্নানের মধ্যে নাকি দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং এই দ্বন্দ্বের কারণে নাকি সিলেটের অনেক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে! কে বা কারা এই সংবাদটি প্রচার করছেন জানি না, তবে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। যে বা যারা এটি প্রচার করছেন, তারা হয়তোবা কোনো বিশেষ বা অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করছেন। ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না, তবে একটি বিশেষ কারণে দিচ্ছি আর তা হলো আমার এবং মান্নানের স্থানীয় অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন আর তাঁদের মধ্যে যাতে কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়।”

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মান্নান ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোমেন দুজনই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

মোমেন এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমবারই মন্ত্রী হয়েছেন।  

মান্নান এনিয়ে তৃতীয় বার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। মোমেনের ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তার সঙ্গে একবার অর্থ প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন মান্নান। পাঁচ বছর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর পর মোমেনের সঙ্গেই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।