রীতিমত মাদকের গবেষণাগার

ঢাকার উত্তরায় অভিযান চালিয়ে এক মাদকচক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা সেখানে আইস, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক তৈরি ও মোড়কজাত করত, পাশাপাশি গবেষণাও চালাত বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2021, 03:57 PM
Updated : 18 June 2021, 05:22 PM

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ‘বিপুল’ পরিমাণ আইস, ইয়াবা, বিদেশি মদ, গাঁজা এবং ১৩টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার যন্ত্র, মাদক তৈরি উপাদান এবং ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তররা সেখানে মাদকের কারখানা খুলে বসেছিল। সেই কারখানায় মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’ বা ‘ক্রিস্টাল মেথ’ ছাড়াও 'ইয়াবা' মোড়কজাত করা হত, তৈরি করা হত 'ঝাক্কি' নামের এক ধরনের ককটেল মাদক।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে তারা ইয়াবার রঙ বদলে প্যাকেটজাত করত। পাশাপাশি উত্তরায় তারা একটি ‘মেথ ল্যাব’ তৈরির চেষ্টায় ছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, ওই কারখানা ঘিরে ১০-১২ জন ব্যবসায়ীসহ ৪০-৫০ জনের একটি সিন্ডিকেটকে র‌্যাব চিহ্নিত করেছে, যাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।

“বিভিন্ন বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব মাদকের নিয়মিত গ্রাহক এবং তাদের অনেকে এই সিন্ডিকেটের সদস্য।”

গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী তৌফিক হোসাইন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছেন, যাকে এই চক্রের ‘অন্যতম হোতা’ বলছে র‌্যাব।

বাকিদের মধ্যে জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন (৩৭) লন্ডনে বিবিএ পড়েছেন, খালেদ ইকবাল (৩৫) ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। রাকিব বাসার খান (৩০) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। আর আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র (৩৫) এবং সাইফুল ইসলাম সবুজ (২৭) এসএসসি পাস করে আর পড়ালেখা করেননি।

এদের মধ্যে রুদ্র ওই সিন্ডিকেটে ‘কেমিস্ট রুদ্র’ নামে পরিচিত। তিনিই ইয়াবার রং বদল করার এবং ‘ঝাক্কি’ নামে ককটেল মাদক তৈরির মূল কারিগর।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের বড়ি, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে এই ঝাক্কি তৈরি কররত রুদ্র। তিনিই ল্যাবটি পরিচালনা করতেন। সেজন্য ওই সিন্ডিকেট থেকে তাকে একটি বাসাও ভাড়া করে দেওয়া হয়েছিল।

কমান্ডার মঈন বলেন, “গ্রেপ্তার জুবেইন ও খালেদ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা অর্থ বিনিয়োগ করত, বাকিরা ব্যবসা চালাত। তৌফিক হলেন তাদের সমন্বয়কারী। রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা তাদের টার্গেট। এরকম ৪০ থেকে ৫০ জন গ্রাহক আছে এই সিন্ডিকেটের।"

উত্তরায় জুবেইনের বাসায় এবং বায়িং হাউজ নাম দিয়ে তৌফিকের ভাড়া করা অফিসে এসব শিক্ষার্থীরা গিয়ে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। ওই চক্রের সদস্যরাও সবাই ইয়াবা ও আইসে আসক্ত বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

'আইস' মেথামফিটামিন জাতীয় মাদক। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনে এর ব্যবহার বেশি। ১০ গ্রাম আইস লাখ টাকাতেও বিক্রি হয় চোরা বাজারে।

সেবু, ক্রিস্টাল মেথ কিংবা ডি মেথ নামেও এ মাদক পরিচিত। এ নেশায় আসক্ত হলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতা তৈরি হতে পারে, বাড়তে পারে স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতার ঝুঁকি।

দেশে প্রায় দুই দশক হল ফেনসিডিলের জায়গা দখল করেছে ইয়াবা। ফেনসিডিল মূলত আসত ভারত থেকে, আর ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে। গত তিন বছরে আইসসহ বেশ কয়েকজন ধরা পড়ার পর এ মাদকের ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ইয়াবার মত আইসও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের এসব সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছায় বলে তারা জানতে পেরেছেন। উত্তরার ওই চক্রটি অন্তত পাঁচ বছর ধরে আইস এবং দুই বছর ধরে ঝাক্কির ব্যবসা চালিয়ে আসার কথা স্বীকার করেছে।