লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ফিরে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ পৃষ্ঠপোষক, টঙ্গীতে গ্রেপ্তার ১২

‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ বা ‘ডি কোম্পানি’ নামের একটি ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সদস্য সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব, যেটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজিব চৌধুরী বাপ্পী দুই বছর লন্ডনে পড়াশোনা করে আসা এক ব্যক্তি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2021, 06:23 PM
Updated : 6 June 2021, 06:30 PM

রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গীতে এই গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে র‌্যাব।

কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিতি পেলেও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জন বাদে সবার বয়স ২০ এর ওপরে।

রোববার র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ বা ‘ডি কোম্পানি’ নাম ধারণ করা গ্যাংটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজীব চৌধুরী ওরফে লন্ডন বাপ্পী (৩৫) নামে এক ব্যক্তি।

লন্ডন বাপ্পী ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন মইন আহমেদ ওরফে ডন নীরব (২৪), তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), রাজিব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব (৩০), সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), রবিউল হাসান (২০), মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২) এবং ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন।

তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ছয় হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে টঙ্গিতে বাপ্পীর আস্তানা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও কিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর অপরাধী চক্রের ১২ সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব-১। রোববার দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে তাদের আনার পাশাপাশি তাদের কাছে পাওয়া অস্ত্র, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাও দেখানো হয় সাংবাদিকদের। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাংটির ধারালো অস্ত্র নিয়ে ‘আক্রমণের’ দুটি ঘটনা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই গ্যাংয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজিব চৌধুরী বাপ্পী দুই বছর লন্ডনে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

চার বছর আগেও তিনি এক বার অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন। ছয় মাস পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও নানা অপরাধে যুক্ত হন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, গত ১ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘ডি কোম্পানি’ নামে পরিচিতি পাওয়া গ্যাংটির কয়েকজন সদস্য টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার ভূঁইয়া পাড়া জামে মসজিদের সামনে ফুচকা খেতে যায়।

এসময় আগে থেকেই ফুচকা বিক্রেতার চেয়ারে ক্রেতারা বসে ফুচকা খাচ্ছিলেন। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কয়েকজনকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন।

এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় তারা তুহিন আহম্মেদ ও তুষার আহম্মেদ নামে দুই ক্রেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করেন।

এ ঘটনায় তুহিন আহম্মেদ বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টাসহ সংঘবদ্ধ হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেন।

ওই মামলা করার কারণে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বলে সংবাদ সম্মেলেন জানানো হয়।

গ্যাং এর সদস্যরা এরপর ৩ জুন আরিচপুর এলাকার একটি দর্জি দোকানে ভাংচুর চালায়।

এসময় তারা চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে আরজু মিয়া (৩৪), তার ভাই সুজন মিয়া (২৪) ও সুজনের স্ত্রী রুপালী (২১) গুরুতর আহত হন।

র‌্যাব-১ এরপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন জানান, গত শনিবার রাতভর টঙ্গী ও উত্তরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ওই এলাকায় মাদক সেবন, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা অপকর্মে যুক্ত ছিল দাবি করছে র‌্যাব।