জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুমোদন

দেশের নাগরিকদের বৈধ পরিচয়পত্র ও স্মার্ট কার্ড দিতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস’ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2020, 01:01 PM
Updated : 24 Nov 2020, 01:01 PM

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের অন্যান্য সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবরা রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হন।

একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দেশের ১৪ বছরের বেশি বয়সী সকল বাংলাদেশিদের ছবিসহ ভোটার আইডি ও স্মার্ট কার্ড তৈরির জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, প্রকল্পটি মূলত ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গৃহীত ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস’ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়।

এই পর্যায় আগামী মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের নভেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, এর আগে ২০১১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রকল্পটির ওই পর্যায় এখনও চলমান রয়েছে, সেটি আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে।

২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের মতোই জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ এবং ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য যাবতীয় তথ্য প্রদান করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।

২০০৮ সালে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার আমলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড তৈরির জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ভোটার তথ্যভাণ্ডারও প্রস্তুত করা হয়।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় সারা বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ৪০টি দেশে বিশেষ করে যেসব দেশে তুলনামূলক বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, সেসব দেশেও পরিচালনা করে সেখানকার বাংলাদেশিদের তথ্য নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হবে।”

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মুল কাজ হচ্ছে স্মার্ট কার্ড উৎপাদন এবং নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করা।

“প্রকল্পটির এই পর্যায়ের আকর্ষণ হচ্ছে এবার স্মার্ট কার্ড দেশেই উৎপাদন করা হবে। এই স্মার্ট কার্ড এখন ফ্রান্স থেকে আমদানি করা হয়েছে। এখন নতুন প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশেই স্মার্ট কার্ড উৎপাদন করা হবে। আমরা হিসাব নিকাশ করে দেখেছি যে, স্মার্ট কার্ড দেশে উৎপাদন করলে খরচও কম হবে।”

বৈঠকে ১০ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ের সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা এবং ৪ হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা থেকে যোগান দেওয়া হবে।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-

>> ‘প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

>> ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

>> ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (ফেস-১); রুরাল কানেক্টিভিটি মার্কেট অ্যান্ড লজিস্টিক ইনফ্রেস্ট্রাকচার ইম্প্রুভমেন্ট’ প্রজেক্ট। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

>> ‘উই কেয়ার-ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

>> ‘পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধাদির উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

>> ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থাপন প্রথম পর্যায় (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। এই প্রকল্পটিতে ৫৪ কোটি টাকা বেড়ে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০৭ কোটি টাকা।