মামলায় মৃত, বাস্তবে জীবিত: হাই কোর্টে ‘ব্যতিক্রমী’ এক আবেদন

নারায়ণগঞ্জের নিখোঁজ এক কিশোরীকে হত্যার স্বীকারোক্তি আসামিরা দিলেও সেই কিশোরীকে জীবিত ফিরে পাওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে হাই কোর্টে রিভিশন মামলার একটি আবেদন হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2020, 11:56 AM
Updated : 25 August 2020, 11:57 AM

ওই কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় তার বাবার করা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, অপহরণ মামলাটির শুদ্ধতা, বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই আবেদনে।

এছাড়া অপহরণ মামলাটির নথি তলবের আরজিও জানানো হয়েছে আবেদনে।

মঙ্গলবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে আবেদনটি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবী হলেন মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির ও মো. মিসবাহ উদ্দিন।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৫ এবং ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতর পদক্ষেপ চেয়েছেন এই আইনজীবীরা।   

তাতে বলা আছে, অধস্তন আদালতের কোনো অবৈধতা অথবা বড় ধরনের কোনো অনিয়ম যদি উচ্চ আদালতের নজরে আসে অথবা কেউ আনে অথবা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নজরে আসে, তাহলে উচ্চ আদালত অধস্তন আদালতের রেকর্ড কল করে অবৈধতা, অনিয়মের অভিযোগ যাচাই করতে পারেন।

তবে শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের এই আবেদনটি একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যে পদক্ষেপটা নিয়েছি, সেটি প্রচলিত নিয়মে নেই। কারণ রিভিশন মামলা দায়ের করতে হয় কোনো রায় অথবা আদেশের বিরুদ্ধে।

“আজকে যে আবেদনটি করা হয়েছে, সেটি রায় কিংবা আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়নি। কারণ আবেদনকারী কেউই অভিযুক্ত না কিংবা ফিরে আসা ওই কিশোরীর অভিভাবক বা হাই কোর্টের কোনো আইনজীবী এই মামলায় আসামিও না।

“তাহলে প্রশ্ন ওঠে আবেদনটা কোন এখতিয়ার বলে করা হলো। রিভিশনাল পাওয়ারে হাই কোর্টের একটা এখতিয়ার আছে, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত সে পাওয়ার প্রয়োগ করতে পারে। যে কারণে আমাদের আবেদনে অপহরণ মামলাটির শুদ্ধতা, বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আবেদনে মামলার নথি তলব করে পরীক্ষাপূর্বক উপযুক্ত আদেশ প্রদানের প্রার্থনা করা হয়েছে।”

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, বাদী ও আসামিকে বিবাদী করা হয়েছে আবেদনে।

নারায়ণগঞ্জে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়- তিন আসামি আদালতে এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

ওই তিন আসামিই এখন কারাগারে। অথচ অপহরণের ৪৯ দিন পর সেই কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরী এখন এক জনকে বিয়ে করে সংসার করছে।

সোমবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আইনজীবী শিশির মনির প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনলে আদালত লিখিত আবেদন করতে বলে।

এরপরই সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে রিভিশন মামলার আবেদন দায়ের করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ জুলাই শহরের দেওভোগ এলাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়। তাকে না পেয়ে প্রায় মাসখানেক পর ৬ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করতেন।

মামলার পর পুলিশ ওই কিশোরীর মায়ের মুঠোফোনের কল হিস্ট্রি চেক করে অটোরিকশা চালক রকিবের সন্ধান পায়। রকিবের নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে ফোন করেন আব্দুল্লাহ।

পুলিশ অটোরিকশা চালক রকিব (১৯), আব্দুল্লাহ (২২) ও খলিলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিল্টন হোসেন ও বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ওই কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

নিখোঁজ হওয়ার ৪৯ দিন পর মেয়েটি বাড়িতে টাকা চেয়ে ফোন করলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। তখন পুলিশ রোববার কিশোরীকে উদ্ধার করে।

কিশোরীর স্বামী ইকবালকে আটক করেছে পুলিশ। ইকবাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা বিয়ে করে বন্দর এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছিলেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে তিন আসামি কেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন?