কোটি টাকা আত্মসাৎ: দুদকের রিমান্ডে সাহেদ

পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) গুলশান করপোরেট শাখার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আদালত প্রতিবেদক.বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2020, 09:33 AM
Updated : 10 August 2020, 09:33 AM

দুদকের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ সোমবার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ গত ৬ আগস্ট আসামি সাহেদকে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছিলেন। শুনানির জন্য সোমবার সাহেদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল এদিন রিমান্ড শুনানিতে অংশ নেন। সাহেদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় তাকে আইনজীবী নিয়োগের সময় দেন বিচারক।

অন্য কয়েকটি মামলার শুনানি নিয়ে পরে বিচারক সাহেদের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শুরু করেন। কিন্তু তখনও সাহেদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।

সাহেদ নিজেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “আমি নিয়মের কোনো ব্যতয় করিনি। ব্যাংকে আমার ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ছিল। যার বিপরীতে আমি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিই।”

এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, “এ কথা ডাহা মিথ্যা। বাঁচার জন্য একটার ঘাড়ে তিনি আরেকটা বসাচ্ছেন।”

শুনানি শেষে বিচারক সাহেদকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন দুদককে।

দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে গত ২৭ জুলাই সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পদ্মা ব্যাংকের সাবেক অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক রফে বাবুল চিশতী চিশতী, তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতি এবং রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রিজেন্ট হাসপাতালের নামে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় একটি হিসাব খোলেন সাহেদ।

হাসপাতালের জন্য ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় একটি এমআরআই মেশিন কেনার কথা বলে হিসাব খোলার দিনই সাহেদ ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের কাছে ১ কোটি টাকার এফডিআর বন্ধক রেখে ২ কোটি টাকার ঋণের জন্য আবেদন করেন।

ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা না দেখে পরের দিন সাহেদের আবেদন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয় উল্লেখ করে মামলা বলা হয়, ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি সাহেদের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে ২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন।

এরপর ১৯ জানুয়ারি এমআরআই মেশিন সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি টাকার পে অর্ডার ইস্যু করা হয়। ২১ জানুয়ারি শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা মহিলা শাখা থেকে সেই অর্থ তুলে নেওয়া হলেও তা দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের জন্য কোনো এমআরআই মেশিন কেনা হয়নি বলে জানানো হয়েছে মামলার এজাহারে।

সেখানে বলা হয়, সাহেদ ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। এফডিআরের এক কোটি টাকা সমন্বয়ের পর বাকি এক কোটি টাকা থেকে সুদ আসলসহ মোট দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা এখন সাহেদের কাছে পাওনা রয়েছে ব্যাংকের।

দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য তুলে ধরে এজাহারে বলা হয়, ওই ২ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরের আগেই সাহেদ ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি পদ্মা ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায় বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৩৫ লাখ টাকা জমা দেন। এই টাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী।

বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী রোজী চিশতী, মেয়ে রিমি চিশতী ও ছেলে রাশেদুল হক চিশতী বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের মালিক।

এর আগে গত ২২ জুলাই এনআরবি ব্যাংকের এক কোটি ৫১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতি এবং চিকিৎসার নামে প্রতারণার মামলায় গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।