নামতে না দিয়ে দেড় শতাধিক বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে ইতালি

করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদের কেলেঙ্কারির মধ্যে কাতার এয়ারওয়েজের দুটি ফ্লাইটে ইতালিতে যাওয়া ১৬৫ বাংলাদেশিকে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2020, 07:45 AM
Updated : 9 July 2020, 07:45 AM

ইতালির বার্তা সংস্থা এএনএসএ জানায়, কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট বুধবার রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে নামার পর ওই উড়োজাহাজে থাকা ১২৫ বাংলাদেশিকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

অন্য দেশের যাত্রীদের নামিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হলেও বাংলাদেশি যাত্রীদের ওই উড়োজাহাজে করেই পরে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। 

লা রিপাবলিকা জানিয়েছে, ওই বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ১৫ জন ইতালীয়সহ ৯৩ জনকে নামার অনুমতি দেওয়া হয় এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়।

অন্য ঘটনাটি ঘটেছে মিলানের মালপেনসা বিমানবন্দরে। সেখানে ৪০ জন বাংলাদেশিকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে নামতে না দিয়ে একই উড়োজাহাজে করে আবার দোহায় ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়ান্টেড ইন রোম নামের একটি নিউজ পোর্টাল। 

গত ৭ জুলাই ঢাকা থেকে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ইতালি সরকার।

পাশাপাশি গত কয়েক সপ্তাহে ইতালিতে পৌঁছানো পাঁচ থেকে ছয়শ বাংলাদেশিকে খুঁজে বের করে পরীক্ষা করারও উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য দপ্তর।

এর মধ্যে ইতালির রাজধানী রোম যে অঞ্চলে সেই লাৎসিও কর্তৃপক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঢালাও করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

রয়টার্স এর আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ওই অঞ্চলে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে সর্বশেষ শুক্রবার একজনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যিনি মাত্রই দেশ থেকে ফিরেছেন।    

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ইতালি থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের বৃহস্পতিবার রাতে দেশ পৌঁছানোর কথা রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার রাত ২টা ১০ মিনিটে দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট ঢাকায় আসার কথা রয়েছে বলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান জানিয়েছেন। 

কাতার এয়ারওয়েজের মার্কেটিং বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতালি সরকার যতদিন না বাংলাদেশিদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিচ্ছে, ততদিন তাদের উড়োজাহাজে আর কোনো বাংলাদেশি ইতালি যেতে পারবেন না। তাই আমরা এখন ইতালীগামী যাত্রীদের টিকিট বুকিং বন্ধ রেখেছি।”

গত ফেব্রুয়ারিতে যখন ইতালিতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সে সময় বাংলাদেশে এই রোগ পৌঁছায়নি। তখন ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে দলে দলে প্রবাসীরা ফিরতে শুরু করে।

এক ভোরে ইতালি থেকে ফেরা কয়েকশ’ প্রবাসীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনা হজক্যাম্পে নেওয়ার পরও তাদের বিক্ষোভের মুখে ছেড়ে দেয় সরকার। ওই প্রবাসীদের বাসায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়।

এর কিছু দিন পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিতে শুরু করে। ৮ মার্চ প্রথমবারের মত যে তিনজনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, তাদের দুজন ছিলেন ইতালিফেরত।

ইতালি অতি সংক্রামক এই রোগের বিস্তারে লাগাম পরাতে পারলেও ধুঁকছে বাংলাদেশ। গত মাসখানেকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এরইমধ্যে সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৭২ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই হাজার।