‘প্রতারক’ সাহেদনামা

এমএলএম ব্যবসা থেকে শুরু করে নানারকম জালিয়াতি-প্রতারণার ডজন ডজন মামলার খবর ঢেকে রেখে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ভিভিআইপিদের মাঝখানে হাজির হতে বেগ পেতে হয়নি তার।

রিয়াজুল বাশার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2020, 06:56 PM
Updated : 9 July 2020, 08:05 AM

সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সরকারি আমলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা অসংখ্য সেলফি তার ফেইসবুক পেইজের শোভা বর্ধন করে চলেছে।

তিনি রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম; করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন তাকে খুঁজছে।

রিজেন্ট গ্রুপের দুটি হাসপাতাল ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে র‌্যাব। সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলাও হয়েছে।

রিজেন্টকে ‘ডেডিকেটেড করোনাভাইরাস হাসপাতাল’ ঘোষণার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির দিন

এর আগেও ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা বলার চেষ্টা করেছেন রোগী ও স্বজনরা, কিন্তু সাহেদের প্রভাবের কাছে তা চাপা পড়ে গেছে। এখন রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে সাহেদের নানা কীর্তির কথা।

এখন জানা যাচ্ছে, প্রতারণার অভিযোগে এক সময় জেলেও যেতে হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম নেওয়া সাহেদকে। কিন্তু ‘প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যের’ জোরে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতেও পদ পেয়ে গিয়েছিলেন।

সাহেদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের ছবি যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে, তেমনি বিএনপি আমলের কয়েকজন হোমড়া চোমড়ার সঙ্গে তার ছবি আর পেপার ক্লিপিং বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

বলা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝোলা জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী এবং দুর্নীতির দায়ে জেলে থাকা গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল সাহেদের।

তাকে হরহামেশাই অতিথি করে আনা হত টেলিভিশনের টক শোতে। অনেক সাংবাদিক তার প্রশংসায় ফেইসবুকে পোস্ট দিতেন। তার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কয়েকজন সাংবাদিককেও এখন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। 

এরকম একজন ব্যক্তি কী করে হরমামেশাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘ভিআইপিদের’ মাঝে উপস্থিতি হতেন, সেই প্রশ্ন রেখেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।

তার ভাষায়, সাহেদের মত একজন ‘প্রতারককে’ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রবেশাধিকার দিলে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফের মহাপরিচালক পদে কাজ করা হাসান সারওয়ার্দী বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়েও কাজ করেছেন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জনগণের, রাষ্ট্রের ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাকে কাজ করতে হয়েছে পেশাজীবনে। এ বিষয়ে আমার আগ্রহও রয়েছে। সে কারণে আমি মনে করি, এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ। এ ব্যাপারে আরও প্রখর দৃষ্টি রাখা জরুরি।”

যেভাবে উত্থান

সাতক্ষীরার ছেলে সাহেদ স্কুলের শেষ দিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন। তার মা সুফিয়া করিম এক সময় মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবা সিরাজুল করিম ছিলেন ব্যবসায়ী। শহরের কামালনগরে করিম সুপার মার্কেট নামে একটি বিপণি বিতান ছিল তাদের।

সাহেদের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা ওই মার্কেট বিক্রি করে স্থায়ীভাবে সাতক্ষীরা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন। তবে সাহেদ মাঝে মাঝে সাতক্ষীরায় যেতেন এবং নিজেকে ‘বিশাল কিছু’ দাবি করে পুলিশের কাজে ‘ব্যাঘাত সৃষ্টি করতেন বলে জেলার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এমএলএম ব্যবসা খুলে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেন সাহেদ। এছাড়া চাকরির নামে অর্থ নেওয়া, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কো-অপারেটিভ থেকে অর্থ আত্মসাৎ, ব্ল্যাকমেইলসহ নানা অভিযোগে ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এই সাহেদই পরে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে প্রতিষ্ঠা করেন রিজেন্ট গ্রুপ। বেশ কয়েক বছর আগে থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় তার যাওয়া-আসা শুরু হয় বলে বলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা জানান।

কেবল রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে নয়, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকেও বিভিন্ন সময়ে তার আনুকূল্য পাওয়ার তথ্য আসছে এখন।

 

চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এত গোয়েন্দা সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি বিভাগ সবাইকে ফাঁকি দিল লোকটা! তার মানে সবাইকে সে ম্যানেজ করে ফেলেছে। মন্ত্রী, সচিবের পাশে বসে থাকে!”

অবসরপ্রাপ্ত এই জেনারেল গত ডিসেম্বরে সাহেদের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন ওই পোস্টে।

“চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার সময় বিমানবন্দরে দেখা। ভদ্রলোক বললেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি সংক্রান্ত প্রধান। জনাব আবুল কালাম এর স্থলাভিসিক্ত। ঢাকা ফিরে জানলাম বিষয়টি পুরাই মিথ্যা।

“কিন্তু কিছু পুলিশ/আনসার তাকে সালাম দিয়ে বিদায় দিল। বিগত ডিসেম্বরের ঘটনা বলছি। শাহেদ/সাহেদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও তার আসল নাম কিন্তু মো. শাহেদ করিম, পিতা. সিরাজুল করিম, মাতা. মৃত সুফিয়া করিম। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তার মা মৃত্যুবরণ করেন ০৬ নভেম্বর ২০১০ইং সালে।”

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতেই সাহেদের হাসপাতাল সরকারি অনুকূল্য পেয়ে ‘করোনাভাইরাস ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে। লাইসেন্সের নবায়ন না করা ওই হাসপাতালকে কেন ওই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল- তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে।

দৈনিক নতুন কাগজ নামের একটি পত্রিকা খুলে তথ্য অধিদপ্তর থেকে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নিয়েছিলেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ

পরীক্ষা না করেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করায় উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখা ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এসবের পাশাপাশি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন সাহেদ। বানিয়েছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্রঋণ ও কর্মসংস্থান সোসাইটি। আবাসন ব্যবসাও তিনি খুলেছেন। এই সাহেদকে নিয়মিতভাবে টেলিভিশন টকশোতেও দেখা যেতে।

হাসান সারওয়ার্দী তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, সাহেদ কখনও নিজেকে মেজর ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী, কখনও কর্নেল ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী, কখনো মেজর সাহেদ করিম হিসেবে পরিচয় দিতেন।

“কিন্তু তার আসল নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে শাহেদ করিম লেখা। বর্তমানে সে মো. শাহেদ নামে আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে যার নম্বর হল ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫। আর এ জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় ২৫-৮-২০০৮ ইং।

“কিন্তু তাতে তার মা মারা গেছে লেখা রয়েছে, অথচ তার মা মৃত্যুবরণ করেন ০৬ নভেম্বর ২০১০ ইং। তাতেই প্রমাণ হয় এটাও ভুয়া। ঠিকানা হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১ রয়েছে। গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলায়।”

জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির এই অভিযোগ বা সাহেদের বিরুদ্ধে অন্য সব অভিযোগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করে দেখতে পারেনি। এ বিষয়ে ‘পলাতক’ সাহেদের বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।

সাহেদ সম্পর্কে হাসান সারওয়ার্দী লিখেছেন, “এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও প্রতারণা বাটপারি করে আজ শত শত কোটি টাকার মালিক। বিএনপি সরকারের আমলে রাজাকার মীর কাসেম আলী ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাথে সর্ম্পক গড়ে তাদের মাধ্যমে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অন্যতম কর্তাব্যক্তি হয়ে উঠে সে।

“১/১১ ফখরুদ্দীন সরকারের সময় খাম্বা মামুনের (গিয়াস আল মামুন) সাথে সে ২ বছর জেলও খাটে। জেল থেকে বের হয়ে শাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডে এমএলএম কোম্পানি বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামে বাটপারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। আর সেসময় তার নাম ছিল মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী।

“তার বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় ২টি মামলা, বরিশালে ১টি মামলা, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিস এ চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে সে মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক বিমানবন্দর শাখা থেকে ৩ কোটি টাকা লোন নেয় আর সেখানে সে নিজেকে কর্নেল (অব.) পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র দাখিল করেন সে ব্যপারে আদালতে ২টি মামলা চলমান আছে।”

চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলছেন, সাহেদ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্তাব্যক্তিদের ‘কাছের লোক’ পরিচয় দিয়ে মানুষকে ‘হুমকি-ধমকিও’ দিতেন।

সাহেদের কর্মকাণ্ডের কিছু নমুনা পাওয়া যায় উত্তরার রিসোর্স এলিভেটরস এর মালিক এস এম রাজু আহমেদের কথায়।

তিনি  বলেন, “প্রায় দেড় বছর আগে থেকে আমার সঙ্গে সাহেদের পরিচয়। সে আগাগোড়া একজন প্রতারক। হাসপাতালের লিফট ঠিক করার জন্য আমাকে তিন লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছিল। কাজ করতে গিয়ে দেখি লিফটের দরজাসহ অনেক কিছুই নষ্ট। তখন আরও দুই লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার চাইলে আমাকে কাজ করতে বলেন।

“কয়েক মাস ঘুরে পাঁচ লাখের মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার তুলতে পেরেছি। এরপর প্রতিদিন অফিসে যাই, বছরখানেক এভাবে চলতে থাকলে উত্তরা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে নিয়ে গেলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। অবশেষে পাঁচ লাখের মধ্যে তিন লাখ পেয়েছি।”

সাত মাস চাকরি করে ছয় মাসের বেতন না নিয়েই চাকরি ছাড়তে হয়েছিল রিজেন্ট হাসপাতালের মার্কেটিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলমকে।

তিনি বলেন, “এক বছর আগে রিজেন্ট হাসপাতালে চাকরি নিয়েছিলাম, প্রথম মাসের বেতন পেয়েছি তিন মাস পরে। এভাবে সাত মাস চাকরি করে বেতন না পেয়ে অনেক কষ্টে চাকরি ছেড়েছি। বেতনের কথা বললে সাহেদ সাহেব আমাকে বলতেন, পেয়ে যাবেন, কাজ করেন। বেশি কথা বললে সমস্যা হবে। পরে বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়েছি।“

দালালের মাধ্যমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী এনে তাদের ‘আটকে রেখে’ রিজেন্ট হাসপাতালে হাজার হাজার টাকা আদায় করা হত বলেও অভিযোগ তুলেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী।

দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, “সাহেদের বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে, সে গাড়িগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তার গাড়িতে ভিভিআইপি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, অবৈধ ওয়ারল্যাস সেট আর অস্ত্রসহ ৩ জন বডিগার্ড থাকার কারণে সাধারণত পুলিশ তার গাড়ি থামাবার সাহস পায় না।”

সাংবাদিক সংযোগ

গত কয়েক বছর ধরে টেলিভিশন টক শোতে নিয়মিত হাজির হওয়া মোহাম্মদ সাহেদ দৈনিক নতুন কাগজ নামের একটি পত্রিকাও খুলেছেন সম্প্রতি। তিনিই সেই কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক। উত্তরা মিডিয়া ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেও তিনি পরিচয় দিতেন।

প্রতারণার মাধ্যমে বেড়ে ওঠার পথে নানা সময়ে তিনি সাংবাদিকদের একটি অংশের ‘সহযোগিতা’ পেয়েছেন বলে অভিযোগ আসছে এখন। সাংবাদিকরাই কেউ কেউ এ বিষয়ে ফেইসবুকে কথা বলতে শুরু করেছেন। 

সাংবাদিক আনিস আলমগীর লিখেছেন, “এবার খুঁজুন, করোনা কেলেংকারিতে জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ-এর মিডিয়া প্রমোটর কারা। রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা কারা।”

আর সাংবাদিক গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যবস্থাপকদের অনেকের একাডেমিক ও ক্যারিয়ার প্রোফাইল দেখলে সাহেদের সঙ্গে তাদের ছবি ‘বেমানান মনে হবে না’।

শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান লিখেছেন, “৩২ প্রতারণার মামলার আসামিকে ডেকে যারা টকশোতে এনে সমাজকর্মী বুদ্ধিজীবী বানান তাদেরও বিচার হওয়া উচিৎ।”

রুদ্র সাইফুল একটি পত্রিকারকাটিং শেয়ার করেছেন, যেখানে বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে খাবার টেবিলে সাহেদের ছবি দেখা যাচ্ছে।

সাইফুল লিখেছেন, “শাহেদকে যারা প্রমোট করেছে এখন তাদের খুঁজে বের করতে হবে, আশা করব বিএনপির এই নষ্টকে দ্রুত আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।”

একই ছবি শেয়ার করে সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্ত লিখেছেন, “বিএনপির মাছ-গোশতের টেবিল থেকে সাহেদকে আওয়ামী লীগের মধুভাণ্ডারে এনেছেন এক সাংবাদিক নেতা। ওই সাংবাদিক নেতা টকশোতে এমনভাবে কথা বলেন, মনে হয় তিনি বঙ্গবন্ধুর চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ নেতা, অথচ তিনিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রার্থীকে হারিয়ে জামাতকে জেতাতে রাতের আঁধারে টাকা বিলি করেন।”