সনজীদা, সেলিনা, স্বরলিপি পেলেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় চলতি বছরের ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, এবারের বিজয়ী তিনজনই নারী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2019, 07:21 PM
Updated : 15 Nov 2019, 07:21 PM

’নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠক ও লেখক সনজীদা খাতুন, ‘সাতই মার্চের বিকেল’ উপন্যাসের জন্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং ’মৃত্যুর পরাগায়ন’ কবিতাগ্রন্থের জন্য তরুণ কবি স্বরলিপি এ পুরস্কার পেয়েছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বর্ণিল আয়োজনে ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের জন্য এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সেলিনা হোসেন এবং কবি স্বরলিপি তাদের পুরস্কার গ্রহণ করেন। অসুস্থ সনজীদা খাতুনের পুরস্কার নেন তার নাতনী সায়ন্তনী ত্বিষা।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “লেখক পুরস্কারের জন্য লেখে না ঠিকই, কিন্তু পুরস্কার লেখককে তার সৃষ্টি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, যেটা তাকে আরও মহৎ সৃষ্টির প্রেরণায় প্রাণিত করে।”

তিনি বলেন, সনজীদা খাতুনের ‘নজরুল মানস’ বইটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাদের পরিবারের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং লেখকের নিজস্ব অসাধারণ বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ। সেলিনা হোসেনের ‘সাতই মার্চের বিকেল’ উপন্যাসটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে। অসাধারণ বর্ণনা ও কল্পনার মিশ্রণের কারণে এটি ‘অমূল্য সৃষ্টি’ হয়ে থাকবে।

তরুণ স্বরলিপিকে উদ্দেশ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “কবি স্বরলিপিকে সাহিত্য জগতে স্বাগতম। তার সৃস্টিকর্ম বলে দিচ্ছে, তিনি অনেক দূর যেতে পারেন, তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।”

দেশে সাহিত্যের মৌলিক সৃষ্টিকর্মকে উৎসাহ দিতে সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের প্রেরণায় ২০১১ সালে প্রবর্তিত হয় ‘ব্র্যাক ব্যাংক সমকাল’ সাহিত্য পুরস্কার।

'কবিতা ও কথাসাহিত্য', 'প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ' এবং 'হুমায়ুন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার'- এই তিনটি বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

সেলিনা হোসেন বলেন, “এ পুরস্কার প্রবীণদের স্বীকৃতি দিচ্ছে, তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। বাংলা সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার বিশেষভাবে অবদান রাখেছ।”

সনজীদা খাতুনের পাঠানো বার্তা অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান নাতনী সায়ন্তনী ত্বিষা। তিনি বলেন, “সনজিদা খাতুন শুধু রবীন্দ্রনাথ চর্চা এবং ছায়ানটের আড়ালে পড়ে গেছেন। আসলে তার কর্মক্ষেত্র আরও বিস্তৃত। সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।”

স্বরলিপি তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ”কবিতা আমার কাছে বৃক্ষের মত, যা অনেক শাখায় ছড়িয়ে যায়। কবিতা অনেক বড় ক্যানভাস। কখনও এটি বিশাল বিস্তৃত আকার হয়ে ওঠে। এই পুরস্কার আমাকে টিকে থাকতে এবং এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।”

এবারের পুরস্কারে বিচারক হিসাবে ছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং কবি হেলাল হাফিজ।

বিচারকমণ্ডলীর সদস্য কবি হেলাল হাফিজ বলেন, ”ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ইতোমধ্যে বাংলা সাহিত্যে একটি নান্দনিক পুরস্কারে পরিণত হয়েছে। কোনো লেখকই পুরস্কারের জন্য লেখেন না। কিন্তু কেউ যখন নিজের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত হন, তখন তা তাকে আরও নতুন সৃষ্টির জন্য প্রেরণা দেয়।”

এ বছরের পুরস্কারের জন্য ২০১৮ সালে প্রকাশিত মোট ৪৮৭টি বই জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর প্রতিটি ক্যাটগারিতে ছয়টি করে নির্বাচিত বই থেকে বিজয়ী নির্ধারণ করেন বিচারকরা।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি হেলাল হাফিজ, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ নিয়ে মননশীল শাখা এবং কবিতা ও কথাসাহিত্য নিয়ে সৃজনশীল শাখায় বিজয়ীদের প্রত্যেককে দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। আর তরুণ সাহিত্যিক শ্রেণিতে বিজয়ীকে এক লাখ টাক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’স্বপ্ন’ কবিতা অবলম্বনে নৃত্য পরিবেশন করে তুরঙ্গমী নৃত্য দল। এরপর গান গেয়ে শোনান শিল্পী ফেরদৌস আরা।