পিলখানা হত্যা: ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা আসামিদের স্বজনদের

পিলখানা হত্যা মামলায় হাই কোর্টের রায়ে আসামিদের আগের সাজাই বহাল থাকবে, না কি তাদের আপিলে বিচারকরা সাড়া দেবেন তা জানতে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেছেন স্বজনরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2017, 09:28 AM
Updated : 27 Nov 2017, 03:19 PM

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে আলোচিত এ মামলার রায় পড়া শুরু করে। তার আগে থেকেই আসামিদের স্বজনরা আদালতের বাইরে উপস্থিত হতে শুরু করেন।

এ রায়ের খবর সংগ্রহে বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী ও আইনজীবীও উপস্থিত আছেন আদালতে। 

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে নাম বিজিবি) সদরদপ্তরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের এই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।

ঢাকার জজ আদালত ২০১৩ সালে এ মামলার রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া ২৫৬ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। কারও কারও সাজার আদেশ হয় একাধিক ধারায়।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সেলিম রেজার ভাই আলিম রেজা

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানিতে বলা হয়, মূলত পিলখানায় কর্মরত ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি নাসির উদ্দিন খান, ডিএডি মীর্জা হাবিবুর রহমান, ডিএডি আব্দুর রহিম, ডিএডি জলিলসহ কয়েকজন ওই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

এ মামলায় জজ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আলিম রেজার ছোট ভাই সেলিম রেজা রোববার হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে দাবি করেন, তার ভাই ‘নির্দোষ’।

“আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মেজর মকবুলকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে সে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ওই দিন আমার ভাই মেডিকেলে আলট্রাসাউন্ড রুমে ছিল। টানা তিন দিন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।”

সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওইদিন ৩৬ ব্যাটালিয়েনের অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন সিপাহি হাবিব। বর্তমানে তিনি চাকরিতে কর্মরত। সেদিন আমার ভাই ও হাবিব একসঙ্গে ছিল। আমরা এ মামলায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।”

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি বিডিআরের তখনকার জওয়ান ওয়াহেদুল ইসলামও বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন তার ভায়রা আনোয়ার হোসেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে মামলায় ওয়াহেদের ফাঁসি হয়েছে, সেদিন তার বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। সে ওই কাজে ব্যস্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়াতো দূরের কথা, স্বীকারোক্তিমূলক কোনো জবানবন্দিও পাওয়া যায়নি। অথচ তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।”

নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দেলোয়ার হোসেন বিদ্রোহের দিনই পিলখানা থেকে নওগাঁর বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন দাবি করেন তার ভাই উজ্জ্বল হোসেন।

তিনি বলেন, “অভিযোগে বলা হয়েছে, দেলোয়ার যে বিছানায় ঘুমাতেন সেখানে পাঁচটি গুলি পাওয়া গিয়েছে। এ কারণে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, তাকে সাজা দেওয়ার কোনো গ্রাউন্ড নেই।”

আসামিদের স্বজনদের অনেকেই বলেছেন, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে এসেছেন।

“ন্যায়বিচার পাব কি না রায় হলে বোঝা যাবে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার আমরা সবাই চাই, কিন্তু যারা নির্দোষ, তারা যেন ন্যায়বিচার পায়,” বলেন উজ্জ্বল।

রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মধ্যাহ্ন বিরতিতে সাংবাদিকদের বলেন, “পৃথিবীতে এমন নজির আমরা দেখাতে পারব না– এতগুলো সামরিক অফিসারকে বিনা কারণে, বিনা যুদ্ধে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। যেভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে- তা খুবই দুঃখজনক ও বিয়োগান্তক। মাননীয় বিচারপতিদের অবজারভেশনেও এ বিষয়টি এসেছে।”

আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়ার কথা জানিয়ে কাজল বলেন, “যে অপরাধ ও নৃশংসতা হয়েছে, তাতে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর ভূমিকার অবক্ষয় ঘটেছে। আমরা বারবার বলেছি, এ ধরনের নৃশংস ঘটনা যেন আর না ঘটে। অবশ্যই আমরা ন্যায়বিচার পাব।”