ভিত্তি পেল বস্তিবাসীর ফ্ল্যাট প্রকল্প

রাজধানীর বস্তিবাসীদের ঠাঁই দিতে মিরপুরে ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2017, 06:23 AM
Updated : 26 Oct 2017, 10:10 AM

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। বস্তির দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর আমাদের লক্ষ্য। কাজেই বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক আবাসিক ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি।”

সরকার গৃহহীন ও ভূমিহীন সব মানুষের আবাসনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রত্যেকটা মানুষের কথা চিন্তা করি, প্রত্যেকের জন্য একটা জায়গা করে দিতে চাই, সুন্দর ব্যবস্থা করে দিতে চাই।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা বলেন, “একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, সেটাই আমাদের নীতি। এটা জাতির পিতার নির্দেশ।”

 

>> বস্তিবাসীদের জন্য এই ফ্ল্যাট হবে মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ১১ নম্বর সেকশনে।

>> প্রথম পর্যায়ে দুই একর জমিতে পাঁচটি ১৪তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে ১১৭টি ফ্ল্যাট। ওই পাঁচটি ভবনে মোট ৫৩৩টি পরিবার বসবাস করতে পারবে।

>> প্রথম পর্যায়ে ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের কাজ চলতি মাসে শুরু হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

>> ৪৮৩ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে দুটি শোবার ঘর (বেডরুম), একটি বসার ঘরের সঙ্গে খাবার জায়গা (লিভিং কাম ডাইনিং), রান্নাঘর, আলাদা গোসলখানা (বাথরুম) ও টয়লেট এবং একটি বারান্দা থাকবে।

>> প্রতিটি ভবনে থাকবে কমিউনিটি হল। একটি মূল সিঁড়ির সঙ্গে দুটি লিফট এবং দুটি সার্ভিস লিফট থাকবে।

>> প্রকল্প এলাকার অর্ধেক জায়গা খেলার মাঠ, পার্ক, সবুজায়ন ও রাস্তার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

>> প্রতিটি ফ্ল্যাট দশ বছরের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে। দুই বছরে পাঁচ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়বে।

>> দ্বিতীয় পর্যায়ে আট একর জমিতে ১৪ তলার ৮০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে জায়গা হবে নয় হাজার ৪৬৭টি পরিবারের।

ভিত্তিফলক উন্মোচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রতিটি বস্তিতে জরিপ করিয়েছেন, সেখানে সমাজের বিভিন্ন ধরণের চিত্র পেয়েছেন।

“বস্তিবাসীরা যে টাকা দেয়, ভাড়া দিতে হয়, দালালদের দেয়.. সেই তুলনায় এখানে ভাড়া কমই হবে। যে যেভাবে পারে সেভাবে ভাড়া পরিশোধ করবে। কেউ মাসিক দিতে চাইলে দিতে পারবে, সাপ্তাহিক চাইলে সাপ্তাহিক দিবে। কেউ যদি দৈনিক দিতে চায় সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করব।”

বস্তির মানুষ যেন মানুষের মতো বসবাস করার সুযোগ পায়, সেই ইচ্ছা থেকেই এ প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অমানবিক একটি পরিস্থিতিতে তারা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছে বস্তিতে। কিন্তু তাদের কোনো রকম সুযোগ সুবিধা নেই। সেই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।

“ভাড়া দিয়েইতো থাকে। কিন্তু সেই ভাড়াটা দিয়ে যেন ভালভাবে বসবাস করতে পারে, সুন্দরভাবে থাকতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই প্রকল্প নিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা প্রথম দফা। এ প্রকল্প চলতেই থাকবে। আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হবে বলে খুব দ্রুত কাজ শেষ করা যাবে।

ভিত্তিফলক উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুরে বস্তিবাসীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় গণভবনে তার সঙ্গে ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আর অন্য প্রান্তের অনুষ্ঠানে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাও।

বস্তিবাসীরা এই ফ্ল্যাট আদৌ তারা পাবে কিনা- তা নিয়ে একজন ভিডিও কনফারেন্সে সংশয় প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বরাদ্দপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, “এখন থেকেই তালিকা করে পরিচয়পত্র দিতে হবে। ফ্ল্যাট যে পাবে সেই চিঠি ইস্যু করে রেখে দিতে হবে।”

এর আগে অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার জানান, ভাড়া দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না তা নির্ধারণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করা হবে।

তিনি বলেন, “বস্তি উচ্ছেদ নয়, তাদের পুর্নবাসন করা হবে। ঢাকা শহরে বস্তি থাকবে না।”

এ অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী ধানমণ্ডির সাতটি এবং মোহাম্মদপুরে তিনটিসহ মোট ১০টি প্লট এবং পরিত্যক্ত বাড়িতে ২৫৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।

প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১৫০০ থেকে ২৫০০ বর্গফুটের। চলতি মাসে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হবে। ব্যয় হবে ৩৭৩ কোটি টাকা।

ধানমন্ডির ১, ২, ৬/১, ১০/১, ১২/১, ১৫/১ নম্বর সড়ক এবং মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, হুমায়ুন রোড, আসাদ এভিনিউ ও এলিফ্যান্ট রোড এই ফ্ল্যাটগুলো হবে।

মধ্যবিত্ত ও সরকারি কর্মকর্তারা এসব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ পাবেন। ফ্ল্যাটের মূল্য এককালীন বা একাধিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। ফ্ল্যাটের মূল্যের ৫০ শতাংশ অর্থ নির্মাণকালীন চার বছরে সুদবিহীন পরিশোধ করা যাবে। বাকি টাকা ১৬ বছরে ৯ শতাংশ সুদে পরিশোধ করা যাবে।

পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে ধানমন্ডি প্রান্তে থাকা সাংসদ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন।

বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উন্নয়নের জন্য সরকারে ধারাবহিকতা একান্ত প্রয়োজন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হয়ে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দিয়েছিল। তবে এবার সরকার ‘যথেষ্ট’ সময় পেয়েছে।

“২০০৮ থেকে ১৭ পর্যন্ত একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই উন্নয়নের কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারছি। কারণ বিএনপি-জামাতের চরিত্র আছে; এর আগে আমরা যত কাজ করেছিলাম, তারা সব বন্ধ করে দিয়েছিল। একটা কাজও তারা এগিয়ে নিয়ে যায়নি। তারা লুটপাট করেছিল। ২০১৪ সালে আবার ক্ষমতায় এসেছি বলেই আমরা জনগণের কাজ করতে পারছি।”