ছাত্রের পিঠে হাঁটা: তদন্ত কমিটি চাঁদপুরে

চাঁদপুরে শিক্ষার্থীদের হাতে হাত রেখে বানানো ‘পদ্মা সেতুতে’ শোয়া আরেক ছাত্রের পিঠে উঠে হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাঁটার ঘটনায় তদন্ত শুরু হচ্ছে সরকারের নির্দেশে। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2017, 07:42 AM
Updated : 2 Feb 2017, 07:45 AM

চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দা সারোয়ার জাহান বৃহস্পতিবার চাঁদপুর পৌঁছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিকালে নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ডেকেছেন।

হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেন পাটোয়ারীসহ স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইতোমধ‌্যে একটি মামলাও করেছেন এক ছাত্রের অভিভাবক। 

গত সোমবার নীলকমল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছাত্রের পিঠের ওপর চেয়ারম্যানের হাঁটার সেই ছবি ও ভিডিও নিয়ে ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, দুই দল শিক্ষার্থী হাতে হাত রেখে ‘সেতু’ তৈরি করেছে এবং আরেক ছাত্র তার ওপর উপুড় হয়ে শুয়েছে। ওই অবস্থায় তার পিঠের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটোয়ারী।

স্কুলের ডিসপ্লেতে বানানো মানবসেতুতে ছাত্রের পিঠে হাঁটলেন জনপ্রতিনিধি

ফেইসবুকে অনেকেই ওই চেয়ারম‌্যানকে বরখাস্ত করে কারাগারে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনা ঘটতে দেওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে চেয়ারম‌্যানকে বরখাস্ত না করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে সরকার। 

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব অমিতাভ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দা সারোয়ার জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিভাগীয় কমিশনার সচিবের সঙ্গে কথা বলে তাকে ওই ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

“আমি চাঁদপুরে পৌঁছেছি। বিকাল ৩টায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ওই স্পটেই ডেকেছি, সবার সঙ্গেই কথা বলব।”

এদিকে আব্দুল কাদের গাজী নামে একজন অভিভাবক ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন হাইমচর থানায়।

থানার ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বুধবার রাতে দায়ের করা ওই মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী ছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি হুমায়ুন পাটোয়ারী এবং সদস্য মনসুর আহমেদ ও আবুল বাশারকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইমচরের ওসি।

যাকে নিয়ে অভিযোগ, সেই নূর হোসেন বলছেন, স্কুলের আয়োজনে সেটি ছিল পদ্মা সেতুর প্রতীকী উপস্থাপনা। ইচ্ছে না থাকলেও ছাত্রদের ‘জোরালো অনুরোধ’ তিনি ফেলতে পারেননি।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন তার প্রতি সন্তুষ্টি জানিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে মানবসৃষ্ট সেতুর উপর দিয়ে হাঁটার অনুরোধ জানায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমি তাদের পিঠের উপর দিয়ে কিছু সময় হাঁটি।”

প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনও শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপাতে চেয়েছেন।

“প্রতিবছরই আমরা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ডিসপ্লে করি। এবারের ডিসপ্লেতে মানবসৃষ্ট পদ্মাসেতু তৈরি করে তাকে শিক্ষার্থীরা হাঁটার অনুরোধ জানায়। তাতে তিনি সাড়া দেন।”