হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এই তামিমকেই চিহ্নিত করেছিল পুলিশ।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিমের নাম আসে।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বাংলাদেশে দলের শাখাপ্রধান হিসেবে যে আবু ইব্রাহিম আল হানিফের নাম ঘোষণা করেছিল, তাকে তামিম বলেই অনেকে মনে করছিলেন।
গুলশান হামলার পরই তামিমের নামটি ব্যাপক আকারে আলোচনায় আসে।
তামিম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরীর নাতি। মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য।
তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান। কানাডার উইন্ডসরে থাকার সুবাদে ৩০ বছর বয়সী তামিমের বেড়ে ওঠাও সেখানে।
পরিবার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা না গেলেও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তামিম তিন সন্তানের জনক।
তামিমের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার শুরু কীভাবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
এই রকম নানা বেশে তামিম চৌধুরী পালিয়ে থাকতে পারেন বলে পুলিশ ধারণা দিয়েছিল
তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে গত ২ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান।
সেসময় তার আইএস-সংশ্লিষ্টতার দাবি প্রত্যাখ্যান করে আইজিপি শহীদুল তামিমকে ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষনেতা বলে চিহ্নিত করেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “এখানে (গুলশান হামলা) মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। নিও জেএমবির নেতৃত্ব সে দিচ্ছে। এই তামিম চৌধুরীর পর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি।”
আইজিপি বলেছিলেন, গুলশান হামলাকারীদের তামিমই ‘রিক্রুট’ করেছিলেন।
“ঘটনার আগে সে তাদের ব্রিফিং দিয়েছে, তাদেরকে পাঠিয়েছে এবং ঘটনার সময় তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছে, আমরা সে তথ্য পেয়েছি।”
গুলশান হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুরে যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নয়জন নিহত হয়েছিলেন, সেখানেও তামিমের অবস্থান ছিল বলে মনিরুল জানিয়েছিলেন।
এরপর তামিমের বিষয়ে তথ্য দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ।
এই বাড়িতে অভিযানে নিহত হন তামিম চৌধুরী
এর মধ্যেই শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় একটি তিন তলা বাড়ি ঘিরে অভিযানে নামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিট স্টং টোয়েন্টি সেভেন’।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এক ঘণ্টার অভিযানে তামিমসহ তিনজন নিহত হন বলে মনিরুল জানান।
আইজিপি বলেন, “কল্যাণপুরের ঘটনার পরে ওষুধ ব্যবসায়ীর পরিচয়ে তারা এই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। প্রায় এক মাস আগে তারা এই বাসাটি ভাড়া নেয় বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
তামিমকে গ্রেপ্তার করা গেলে জেএমবির ‘নতুন ধারার’ আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসবে বলে আশা করেছিলেন পুলিশ প্রধান শহীদুল হক।
অভিযানের সময় উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে।”
অভিযানের পর আইজিপি শহীদুল সাংবাদিকদের বলেন, “তামিম চৌধুরী সিরিয়াতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল।
“গুলশান হামলা, শোলাকিয়ার ঘটনাসহ যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সবগুলো তামিমের নেতৃত্বে নিও জেএমবি ঘটিয়েছে।”
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “আমরা মনে করি, তামিম চৌধুরীর চ্যাপ্টার এখানে শেষ হয়েছে। বাকি যে জঙ্গিরা রয়েছে তাদেরও আমরা শিগগিরই ধরতে পারব।”