উত্তরা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টরের এভিনিউ ও ১০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের উভয় পাশের আবাসিক প্লটগুলোকে বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরের অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
“আমি একা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব না। কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
গত মাসে ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া গুলশানের একটি ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহত হওয়ার পর গুলশান ও আশপাশের এলাকায় আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে অভিযানে নামে রাজউক, যদিও এ আলোচনা কয়েক বছর ধরেই চলছিল।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানে ধানমণ্ডি ও বনশ্রীতেও অনেক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ হয়েছে।
অভিযান চলতে থাকার মধ্যেই রাজউক এখন বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা রয়েছে। সেজন্য উত্তরা ছাড়াও আরও কয়েকটি আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়ক সংলগ্ন প্লট বাণিজ্যিক হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
“উত্তরার কয়েকটি সড়ক নির্ধারণ করা হয়েছে। গুলশান, বনানীসহ আরও কয়েকটি এলাকার রাস্তাও বিবেচনায় আছে,” বলেন মন্ত্রী মোশাররফ।
কোন কোন এলাকার কোন কোন সড়ক সংলগ্ন এ সুবিধার আওতায় আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সময় আসলে বলা যাবে।”
আবাসিক থেকে বাণিজ্যিকে রূপান্তরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো সড়কগুলো হলো-উত্তরা ১ ও ৩ নম্বর সেক্টরের জসিমউদদীন এভিনিউ, ২ ও ৪ নম্বর সেক্টরের শায়েস্তা খাঁ এভিনিউ, ৩ ও ৭ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি, ৪ ও ৬ নম্বর সেক্টরের শাহজালাল এভিনিউ, ৬ নম্বর সেক্টরের ঈশা খাঁ এভিনিউ, ৬ ও ৮ নম্বর সেক্টরের মাঝের আলাওল এভিনিউ, ১০ নম্বর সেক্টরের রানাভোলা এভিনিউ, ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের গরীব-ই-নেওয়াজ এভিনিউ, ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের শাহ মখদুম এভিনিউ। এছাড়া ১২ নম্বর সেক্টরের ৬/সি নম্বর সড়ক এবং ৭ নম্বর সেক্টরের লেক ড্রাইভ রাস্তা।
এসব সড়কের দুই পাশের ৫৯৪টি প্লটের মধ্যে ২৫৯টিতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখনও খালি রয়েছে ১১২টি প্লট।
এসব সড়কের পাশের প্রতি কাঠা জমি আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরের জন্য ২৫ লাখ টাকা ফি ধরেছে রাজউক।
রাজউকের পঞ্চম সাধারণ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ১৮ জুলাই তা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই এটা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে বলে রাজউকের চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব সড়কের আশপাশের অবস্থা, বাণিজ্যিক সড়ক করলে এর প্রভাব কী হবে তা বিবেচনা করেই প্রস্তাব দিয়েছি। জনস্বার্থের দিকটা বিবেচনা করেই আমরা প্রস্তাবটি পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।
“আমাদের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। অনুমতি পেলে এ ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
উত্তরার বিভিন্ন এভিনিউতে অনেক প্লটে অনুমোদন ছাড়াই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বলে জানান রাজউকের উত্তরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তর করতে অনেকেই আবেদন করছেন। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক প্লটের প্রয়োজন বেড়েছে। মানুষের প্রয়োজনকেই বেশি চিন্তা করা হচ্ছে।
“আর প্লটগুলো বাণিজ্যিক করার ফি হিসেবে সরকারের কোষাগারেও একটা বড় অংকের টাকা আসবে।”
গুলশান হামলার পর রাজধানীতে আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে উত্তরার ৪৩৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ছাড়াও স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে বলে রাজউকের অথোরাইজড অফিসার আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন।