ধর্মঘট ও অবরোধ তুলে নেওয়ায় দুপুরের আগে আগে ঢাকার দুই প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলীতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। রাস্তায় সবুজ রঙের অটোরিকশাগুলোও চলতে দেখা যায়।
Published : 16 Feb 2025, 02:19 PM
মিটারের ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করলে মামলা করার যে নির্দেশনা পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল, সেই চিঠি বিআরটিএ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সচল হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাকা।
অটোরিকশা চালকরা ধর্মঘট ও অবরোধ তুলে নেওয়ায় রোববার দুপুরের আগে আগে ঢাকার দুই প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলীতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। রাস্তায় সবুজ রঙের অটোরিকশাগুলোও চলতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ অটোরিকশা, হালকা যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সব চালককে বলেছি চলে যেতে।সরকার দাবি মাইনা নিছে।”
কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে কথা হয় কয়েক জন চালকের সঙ্গে। সেখানে আমিনুল ইসলাম নামের এক চালক বলেন, “ধর্মঘট এখন আর নেই। তবে ধর্মঘটের ভয়ে অনেকেই গাড়ি নিয়ে নামেনি।”
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সই করা একটি চিঠি ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, গ্যাস বা পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা করার ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ করা হল।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৩৫(৩) ধারা মনে করিয়ে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মালিক বা চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যে কোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন। মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। এ নিয়ম ভাঙলে আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কাটার বিধান রয়েছে।
বিআরটিএ পুলিশকে মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পর আন্দোলনে নামেন ক্ষুব্ধ অটোরিকশা চালকরা। রোববার সকাল থেকে শুরু হয় তাদের ধর্মঘট।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ঢাকার শনির আখড়া, ধোলাইপাড়, গোলাপবাগ, ডেমরা, বাসাবো, রামপুরা, কলেজগেট, আগারগাঁও, মিরপুর, মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চালকরা সড়ক অবরোধ করেন।
তাদের অবরোধের কারণে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এমন অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বিভিন্ন সড়কে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন চলতি পথের যাত্রীরা।
বাংলাদেশ অটোরিকশা, হালকা যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালকরা গাড়ি বন্ধ রেখে বিআরটিএ-তে স্মারকলিপি দিতে আসবে। আসার সময় হয়ত রাস্তায় কোথাও তারা অবস্থান করেছে। আমরা বেলা ১১টায় বিআরটিএ এর সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য স্মারকলিপি দেব।"
অটোরিকশা চালকরা স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত বদলায় বিআরটিএ। শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের (বিআরটিএ পরিচালক) সই করা নতুন চিঠিতে পুলিশকে জানানো হয়, মামলা করার নির্দেশনা দিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি যে চিঠি দেওয়া হয়েছি, সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন তো আইনের জায়গায় আছে, সেটা তো আমরা প্রত্যাহার করতে পারি না। আমরা চিঠিটা প্রত্যাহার করে নিয়েছি- যেটায় ওই আইনের বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়ে মামলা করার কথা বলা হয়েছিল।”
পরে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বার্তায় বলেন, “ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান সম্পর্কিত বিআরটিএ এর ইস্যু করা সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি আজ বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হল এবং অবরোধ প্রত্যাহার করে যান চলাচলে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হল।”
সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অবরোধ তুলে নিয়ে দুপুরের আগেই কাজে ফেরেন অটোরিকশা চালকরা।
মহাখালীতে আন্দোলনে যোগ দিতে অটোরিকশাটি পরিচিত এক জায়গায় রেখে এসেছিলেন চালক রফিকুল ইসলাম। চিঠি প্রত্যাহারের ঘোষণা শোনার পর অটোরিকশা নিয়ে মহাখালীর আমতলীতে চলে আসেন তিনি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, এক মামলায় ৫০ হাজার টাকা কই পামু। এত টাকা দিয়া মামলা করলে তো না খাইয়া মরতে হইব। মিছিলে নাইমা হুনলাম চিডি বাদ দিছে, আমি আর যাই নাই। বাকিরা গেছে বিআরটিএ অফিসে।”
তিনি বলেন, “যার লাইগ্যা নামছিলাম, সরকার তো দাবি মাইনা নিছে। এহন আর থাকুম না। গাড়ি লইয়্যা বাইরাইছি, কপালে যা জোডে আইজ।”
বেলা ১২টার দিকে চালক রফিকে সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তার মিনিট দশেক আগেই ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকশা ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, সবুজ বাগ থানার একটি মিছিল গুলশান-১ এর দিক থেকে এসে মহাখালীর আমতলী হয়ে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার বিআরটিএ কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল।
চিঠি প্রত্যাহারের খবর শুনে রফিকের মত আব্দুর রহিমের সঙ্গে আরো জনা পাঁচেক অটোরিকশা চালক বাড্ডা ফিরে যেতে আলিফ পরিবহনের বাসে ওঠার চেষ্টা করছিলেন।
নেভি-ব্লু রঙের জামা পরিহিত চালকদের একজন হামিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জরিমানা আর করব না। এহন যত তাড়াতাড়ি পারি গ্যারেজে যামু।”
দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসার পর অধিকাংশ চালকই গাড়ি চালাতে শুরু করেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে অনেক অটোরিকশাকে যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
অবরোধ উঠে যাওয়ার পর গাবতলী হয়ে ঢাকার দিকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয় বেলা ১২টার কিছু আগে।
তবে চিঠি প্রত্যাহারের পরও মহাখালীতে মিছিলে যোগ দেন ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকশা ড্রাইভার্স ইউনিয়ন সবুজ বাগ থানার সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলছে, বিআরটিএ অফিসের সামনে যাইতে। আমরা স্মারকলিপি দিমু।”
তিনি বলেন, “মুখে মুখে বললে তো হবে না। বিআরটিএ অফিসে যামু কাগজ আমাদের দিতে হবে।”