জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু

দুই দিনের এই আয়োজনে দেশ ও দেশের বাইরের তিন শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2023, 01:30 PM
Updated : 1 Feb 2023, 01:30 PM

মহামারীতে দুই বছর বন্ধ থাকার পর কবিতার ঝুলি নিয়ে দেশ-বিদেশের কবিদের পদচারণায় আবারও প্রাণবন্ত জাতীয় কবিতা উৎসব।

বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ৩৫তম জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

‘বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’ স্লোগান নিয়ে দুই দিনের এই উৎসব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে। কবিতা পাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীতে ফুটে ওঠে স্বাধীনতার ‍মর্মবাণী।

আয়োজকেরা জানান, এবারের উৎসবে দেশের প্রায় তিন শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন।

এছাড়া দেশের বাইরে দিল্লি থেকে কবি অরুণ কমল, মুম্বাই থেকে কবি হেমন্ত দিভতে, কলকাতা থেকে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, কবি বিথী চট্টোপাধ্যায়, কবি কাজল চক্রবর্তী, কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য এবং আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র, আসাম থেকে কবি অনুভব তুলসি, ত্রিপুরা থেকে কবি রাতুল দেব বর্মণ, নেপাল থেকে কবি ইন্দু থারু, অস্ট্রিয়া থেকে কবি ওয়ালি রি, ইরান থেকে বি মাজিদ পুইয়ান অংশ নিচ্ছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, “একটি দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ওই দেশকে এগিয়ে নেয়। তাই কবি সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করতে হবে।

“দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, এখন আমাদের সমাজ ও সাহিত্যের উন্নতি দরকার। আমরা জাতি হিসেবে দিন দিন লোভাতুর হয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের ভাবতে কষ্ট হয়, আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি কিন্তু লোভ ছাড়তে পারছি না।”

কাগজের দাম কমানোর অনুরোধ জানিয়ে আসাদ চৌধুরী বলেন, “কাগজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের কবি, সাহিত্যিকেরা হারিয়ে যাবে, কিছু লিখতে পারবে না, পাঠক কিছু জানবে না। কাগজের দাম কমলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে আমরা জ্ঞানের কথা জানতে পারব।”

কবিতা উৎসবের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “সকল সুন্দরের শ্রেষ্ঠ সুন্দর হলো কবিতা। তাই তুলনা করতে গিয়ে আমরা বলি, গল্প বা উপন্যাসটি যেন একটি সুন্দর কবিতা, রূপসী মেয়েটি দেখতে ঠিক যেন একটি নিটোল কবিতা, একটি সুন্দর বক্তৃতাকে তাৎক্ষণিক তুলনা করি অসাধারণ কবিতা বলে।

“ভাষার সুন্দরতম রূপ এই কবিতার সঙ্গে যে কোনো মহৎ সৃষ্টির তুলনা নতুন নয়। যে কোনো অনন্য সৃজনের স্রষ্টা মাত্রই একেকজন শ্রেষ্ঠ কবি। কবি উপাধিটি সমাজের কীর্তিমান মানুষদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের স্বীকৃতি জ্ঞাপক।”

এবারের কবিতা উৎসব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে কবি সামাদ বলেন, “সব কবির সৃষ্টির প্রধান পাথেয় স্বপ্ন, সাহস ও ভালোবাসা। আশৈশব নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন, অসম সাহস ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই প্রধান পাথেয় ছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবের। তার শিল্পশৈলীসমৃদ্ধ রাজনীতির সোনালি ফসল এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে এক অনুপম সৃষ্টি ও মহত্তম কবিতা।

“তাই বাংলার স্বাধীনতা আমার, আপনার ও অনাগত কালের সব বাঙালির এক প্রিয়তম কবিতা। আসুন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে আয়োজিত আজকের জাতীয় কবিতা উৎসবে, বাঙালি জাতির সমবেতকণ্ঠ হয়ে, বাঙালির মুক্তির আনন্দে সব কবিকণ্ঠে গেয়ে উঠি — বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা।”

কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, আমাদের প্রত্যাশা—বাংলা ভাষাসহ আরো বেশ কয়েকটি ভাষার কবিদের লেখা ও উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মহামারী, যুদ্ধ, লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দুর্দশা কবলিত অশান্ত পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষের পাশে আমাদের কবিতা মোমের শিখা হয়ে জ্বলবে এই উৎসবে ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কবি ও প্রাবন্ধিক আমিনুর রহমান সুলতান, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, আহ্বায়কের ভাষণ দেন কবি শিহাব সরকার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধিতে ফুল দেন কবিরা।