অন্ধজনে আলো দেওয়া আমাদের কর্তব্য: প্রধানমন্ত্রী

কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের চিকিৎসায় ইতিমধ্যে অনেক মানুষ অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2023, 12:19 PM
Updated : 18 Jan 2023, 12:19 PM

অন্ধত্বসহ চোখের নানা সমস্যায় মানুষ যাতে আধুনিক ও উন্নত চক্ষু চিকিৎসা পায়- তা নিশ্চিতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “প্রতি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার আমরা স্থাপন করছি। একটা বেজ হাসপাতাল রেখে সেখান থেকে এসব সেন্টারগুলোতে টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এই সুযোগ আমরা তৈরি করতে পেরেছি।”

বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি দেশের ১৩ জেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ৪৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে। তিনি রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।

এই অনুষ্ঠানে ভোলার চরফ্যাশন, বরগুনার আমতলী, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের পেকুয়ার কমিউনিটি ভিশন কেন্দ্র ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল। এসব কেন্দ্রের উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন শেখ হাসিনা।

এর আগে দুই ধাপে ৯০টি কমিউনিটি ভিশন কেন্দ্র উদ্বোধনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমরা তৃণমূলে মানুষের দোরগোড়ায় চোখের মেডিকেয়ার পরিষেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

“…অন্ধজনে আলো দেওয়া আমাদের কর্তব্য। আশা করি, সমগ্র বাংলাদেশেই পর্যায়ক্রমে আমরা এই ব্যবস্থা করে দেব।”

কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের সুফল তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এটি একটি জাতি হিসাবে আমাদের জন্য বড় অর্জন। কারণ অনেক মানুষ অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছেন।”

সবাই যাতে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং সকল বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

“আমরা কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মানোন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ এখনও শুরু করতে পারিনি। আশা করছি, শিগগিরই কাজ শুরু করবে।”

মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছানোর উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে সোয়া যুগ আগের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।

“দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ সালে প্রথমবারের মত সরকারে এসে দলমত নির্বিশেষে সকলের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করলেও পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বন্ধ করে দেয়। তাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট ছিল; তারা বলেছিল যে, এই কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকলে এখান থেকে যারা চিকিৎসা সেবা নেবে তারা সবাই আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। তারা ভোট পাবে না, সেই ভয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়।“

সরকার প্রধান বলেন, “কী অদ্ভুত চিন্তা, আপনারা একটু বিবেচনা করেন, আমরা কিন্তু সেগুলো চিন্তা করিনি। কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সবাই চিকিৎসা পাবে। যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে- সে যেমন চিকিৎসা পাবে, যে দেবে না সেও পাবে।

“কারণ, এটা আমি জনগণের জন্য করেছি। আর জনগণের জন্য যে সেবা সেটা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”

বিভাগীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোতে শিশুদের বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়েও যেন হাসপাতাল গড়ে ওঠে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সামগ্রীর থেকে সরকার ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে বলে বেসরকারি খাতেও অনেক উন্নতমানের হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে।

“পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতে নার্সেস ইনস্টিটিউট গড়ে উঠছে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে এবং আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রাপ্তির উপলক্ষ ঘটছে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আর কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কার্যক্রম তুলে ধরেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা।

অনুষ্ঠানে কমিউনিটি আই ভিশন সেন্টার থেকে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা প্রদান সংক্রান্ত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। নতুন চালু হওয়া কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০টি, রাজশাহী বিভাগে চারটি এবং খুলনা বিভাগে একটি রয়েছে।