রাজনীতি

আয়-সম্পদে মঞ্জুর চেয়ে অনেক এগিয়ে তালুকদার খালেক

Byমঈনুল হক চৌধুরী

এবার সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থিতার সময় আগের ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৩২ টাকার দেনা আর নেই।

এই চার বছরে মৎস্য ঘেরের ব্যবসায় মন্দা হলেও কৃষিখাত ও ব্যাংক সুদ বেড়েছে। অস্থাবর সম্পত্তিতে নিজের নামে ৩ ব্যাংকে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা যোগ হয়েছে তার। স্ত্রীর নামেও রয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার খালেক বাগেরহাট-৩ (মংলা) আসনের সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে এবার মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। 

এক মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর গত নির্বাচনে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনির কাছে হেরেছিলেন তালুকদার খালেক। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তার উপর আস্থা হারায়নি।

অন্যদিকে বিএনপি গতবারের বিজয়ী মনিকে বাদ দিয়ে এবার প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে।

নয় বছর ক্ষমতায় না থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুলের ব্যবসা এখন বন্ধ; বাড়ি ভাড়াই এখন তার আয়ের উৎস বলে হলফনামায় লিখেছেন তিনি।

আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধতা পেয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীর যাচাই-বাছাইয়ে।

এছাড়া জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুজ্জাম্মিল হক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবুর প্রার্থিতাও বৈধ বলে রায় পেয়েছে।

মাওলানা মুজ্জাম্মিল বছরে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা, জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান দেখিয়েছেন আড়াই লাখ টাকা। সিপিবির প্রার্থী বাবু নিজের আয় নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

তালুকদার আবদুল খালেক

তালুকদার আবদুল খালেক

হলফনামায় খালেক

বিএ পাস তালুকদার খালেকের আয় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। নৌকার প্রার্থী বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৫ টাকা।

>> বার্ষিক আয়: কৃষি খাতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মৎস্য ঘের ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা, ব্যাংক সুদ ৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৮০ টাকা এবং সাংসদ হিসেবে পারিতোষিক ভাতা পেয়েছেন মোট ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৫ টাকা। নির্ভরশীলদের আয়, বাড়ি ভাড়া, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ টাকা।

[২০১৩ সালে কৃষিখাতে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, মৎস্য ঘের থেকে ২৪ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ টাকা, ব্যাংক সুদ ৪৭ হাজার ৪০৪ টাকা ও সাবেক মেয়র ও সাবেক সাংসদ হিসাবে প্রাপ্ত পারিতোষিক ২২ লাখ টাকার বেশি দেখিয়েছিলেন তিনি]

>> অস্থাবর সম্পদ: নিজের নামে নগদ টাকা আছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা, ৩টি ব্যাংকে জমা আছে দুই কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৬ টাকা। কোম্পানি শেয়ার ২ কোটি টাকার। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১০ লাখ টাকার এফডিআর এবং নিজ নামে পোস্টাল এফডিআর আছে ১৮ লাখ টাকার।

৪৪ লাখ টাকার লেকসাস গাড়ি ও ১৪ লাখ টাকার মাইক্রোবাস রয়েছে।

স্ত্রীর নামে নগদ টাকা রয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯৪ টাকা, দুই ব্যাংকে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৪ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর প্রায় ৭২ লাখ টাকা, প্রায় ৪৯ লাখ টাকা দামের মিটসুবিসি পাজেরো গাড়ি ও ২৫ ভরি স্বর্ণ।

[২০১৩ সালে নিজ নামে ২ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ছিল, স্ত্রীর নামে ছিল দেড় কোটি টাকা। এবার নিজের নামে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন তিনি]

>> স্থাবর সম্পদ: স্বামী-স্ত্রীর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২৩ বিঘা কৃষি জমি, অকৃষি জমি ও পাঁচতলা বাড়ির অংশ বিশেষ রয়েছে। অবশ্য এবার মৎস্য ঘেরে বিনিয়োগ কমেছে।

>> দায় দেনা:  ২০১৩ সালে দায় ছিল স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৩২ টাকা হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন খুলনা অফিসে। এবার অবশ্য তা নেই তালুকদার খালেকের।

>> মামলা: ৯টি মামলা ছিল, সবকটিতে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু

নজরুল ইসলাম মঞ্জু

হলফনামায় মঞ্জু

ধানের শীষের প্রার্থী মঞ্জু বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আয়ের উৎসের ঘরে তিনি লিখেছেন, বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ, বাড়ি ভাড়াই আয়ের উৎস।

>> আয়: বাড়ি ভাড়া থেকে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আর তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। তার মাসিক আয় ২০ হাজার ২৫০ টাকা।

>> অস্থাবর সম্পদ: নগদ ৩ লাখ টাকা, ৮৯০টি ডলার রয়েছে। তার স্ত্রীর রয়েছে নগদ ২ লাখ টাকা, ডলার আছে ১৭ হাজার ৪৫৪টি।

>> স্থাবর সম্পদ: একটি টয়োটা জিপ গাড়ি, স্ত্রীর শূন্য দশমিক ০১৪৩৪৫ একর অকৃষি জমি রয়েছে। আর যৌথ মালিকানায় শূন্য দশমিক ০৬৫০ একর জমি এবং ৪ তলা বিশিষ্ট দালান। দালানে তার অংশ ২/৭।

>> মামলা:  চারটি মামলা রয়েছে। একটি তদন্তাধীন, বাকিগুলো বিচারের বিভিন্ন স্তরে। অতীতে তিনটি মামলা ছিল, তার দুটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে, একটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন।

প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে হলফনামা দেন, তাতে কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলে প্রার্থিতা বাতিলও হতে পারে।

তালুকদার খালেক হলফনামায় ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে ইতোমধ্যে অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মঞ্জু।

সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও তত্ত্বাধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, “প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য নিয়ে আমরাও গণমাধ্যমে আসছি। আমরা বরাবরই বলছি, সব কিছু ঠিক থাকলে ভালো। কিন্তু তা যাচাই-বাছাইয়ের একটি ব্যবস্থাও করতে হবে।”

খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, প্রার্থীদের হলফনামা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে এগুলো তদন্ত করে দেখতে পারে।

এই সংক্রান্ত আরও খবর

SCROLL FOR NEXT