হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল: ইসি

মনোনয়নপত্রে প্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ আট তথ্য দেয়ার নির্দেশ দিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2013, 06:47 PM
Updated : 30 Nov 2013, 06:47 PM

শনিবার এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।

এতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(৩বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রার্থীকে হলফনামার মাধ্যমে ব্যক্তিগত আটটি তথ্য দিতে হবে এবং এর স্বপক্ষে সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয়কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সঠিক তথ্য দাখিল না করলে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়ন বাতিল করবেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ জানুয়ারি ভোটের আগে ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় রযেছে। মনোয়নপত্র বাছাই হবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর।

ইসি সচিবালয়ের উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রার্থী হওয়ার ও থাকার নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করতে না পারলেই প্রার্থিতা বাতিল হবে। আট তথ্য মিথ্যা দিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা বাতিল করবেন। প্রয়োজনে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন।

হলফনামায় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কি না, প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল কি না এবং থাকলে তার ফলাফল, পেশা/জীবীকা, আয়ের উৎস, আগে সংসদ সদস্য ছিলেন কি না, থাকলে ওই সময়ে জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অর্জনে ব্যক্তিগত বা সমষ্ঠিগতভাবে কি ভূমিকা পালন করেছেন, প্রার্থী এবং প্রার্থীর পোষ্যদের সম্পদ ও দায় দেনার বিবরণ, প্রার্থী নিজে ব্যক্তিগত বা যৌথভাবে পোষ্যদের নামে ব্যাংক কিংবা অর্থ লগ্নিকারী কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রকার ঋণ গ্রহণ করেছে কি না এবং করে থাকলে ঋণের পরিমাণ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য।

হলফনামার তথ্য দেয়ার বিষয়ে যথাযথভাবে নিশ্চিত করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ‘ঘরটি’ খালি না রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে নিরক্ষর, স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, অষ্টম শ্রেণি পাস ইত্যাদি উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না থাকলে যে সনদ আছে তা উল্লেখ করতে হবে।

নবম সংসদ নির্বাচনের সময় আদালতের আদেশে মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর আট ব্যক্তিগত তথ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা যোগ করে ইসি। ওই সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লিখেন ‘স্বশিক্ষিত’।

নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা, মো. আবুল কাশেম, আওয়ামী লীগের মো. শফিকুল আজম খান, মো. কবিরুল হক মুক্তি, আওয়ামী লীগের মহিউদ্দীন খান আলমগীর, নাসরিন জাহান রত্নার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতায় অসত্য তথ্য এবং খেলাপি, লাভজনক পদে থেকে নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ আদালত ও ইসিতে আসে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘নাই’ উল্লেখ করেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন থেকে বিএ অনার্স পাস করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এ দুজন অসত্য তথ্য দিয়েছে প্রমাণ হওয়ায় ইসি তাদের সদস্যপদ খারিজে উদ্যোগী হয়েও শেষ পর‌্যন্ত সফল হয়নি।

নবম সংসদে চাকরি থেকে অবসরে (বাধ্যতামূলক) যাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ভোলা-৩ এর আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মো. জসিমউদ্দিনের সদস্য পদ অবৈধ ঘোষণা করে আদালত। সেখানে আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন নির্বাচিত হন।

টাঙ্গাইল-৫ আসনে আবুল কাশেমকে বিল ও ঋণখেলাপি উল্লেখ করে মাহমুদুল হাসান ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এরপর আদালতের রায়ে আবুল কাশেমের সদস্যপদ বাতিল হলে ওই আসনে বিএনপির মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করে ইসি।

শফিকুল আজম খান পৌরমেয়র পদে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ায় গত এপ্রিলে তার পক্ষে রায় আসে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইনে নির্বাচনের আগে মনোনয়নপত্র বাছাই ও পরে নির্ধারিত সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।

নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দাখিলের সুযোগ রয়েছে।