“আমাদের কেউ একজন চেঁচিয়ে বসে পড়ে ডেস্কের নিচে লুকোতে বলল। এরপর আল্লাহু আকবর বলেই গুলি চালানো শুরু করল বন্দুকধারীরা।”
Published : 16 Dec 2014, 08:58 PM
মঙ্গলবার পাকিস্তানের পেশোয়ারে স্কুলে ছাত্র হত্যার এ দৃশ্য বর্ণনা করেছেন হামলায় দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থী।
সালমান (ছদ্মনাম) নামের ১৬ বছরের ওই কিশোর এখন পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সালমান জানান, সামরিক পোশাক পরিহিত চার বন্দুকধারী যখন তাদের ওপর হামলা চালায় তখন সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুল মিলনায়তনে ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শমূলক একটি ক্লাসে ছিলেন তিনি।
বন্দুকধারীরা এসেই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গুলি চালানো শুরু করে।
“তারপর তাদের একজন চিৎকার করে বলে, ‘এখানে বেঞ্চের নিচে অনেক ছেলে আছে। যাও এবং তাদের ধর’।”
“আমি দেখলাম বড় একজোড়া বুট আমার দিকে এগিয়ে আসছে। বেঞ্চের নিচে যেসব ছাত্র লুকিয়েছিল সে বোধহয় তাদের খুঁজছিল।”
দুই পায়েরই ঠিক হাঁটুর নিচে গুলি লাগায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিল সালমানের, তবে জীবন বাঁচাতে মৃত মানুষের অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেয়।
“গলার টাইটি ভাঁজ করে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিলাম, যাতে আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের না হয়। বড় বুট পরিহিত ওই লোক ছাত্রদের খুঁজছিল এবং তাদের গুলি করছিল। দুই চোখ বন্ধ করে যতটা পারি মড়ার মতো শুয়ে থাকি, আবারো গুলি খাওয়ার ভয় হচ্ছিল।”
“আমি থর থর করে কাঁপছিলাম। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখেছি যে, আমার দিকে এগিয়ে আসা কালো বুট জোড়া জীবনেও ভুলব না।”
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে সেনা নিয়ন্ত্রিত আর্মি পাবলিক স্কুলে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বেসামরিক লোকদের ছেলে-মেয়েরাও লেখাপড়া করে।
সালমান যখন হামলার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন তার শয্যার পাশে অশ্রুচোখে ছিলেন মুদি দোকানি বাবা।
সালমান বলে যায়, “কিছুক্ষণ পর লোকটি চলে যায়, কয়েক মিনিট আমি সেখানে থাকি। তারপর আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে জখমের কারণে মেঝেতে পড়ে যাই।
“কোনো রকমে গড়িয়ে গড়িয়ে পাশের রুমে গিয়ে দেখি আরও ভয়ানক দৃশ্য। আমাদের অফিস সহকারীর মৃতদেহ জ্বলতে দেখি। পোড়ার সময়ও চেয়ারের ওপর বসানো মৃতদেহ থেকে রক্ত পড়ছিল।”
ওই নারী কর্মীর লাশে কিভাবে আগুন লাগে, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একজন আলোকচিত্র সাংবাদিক হাসপাতালের মর্গে তার লাশ দেখার কথা জানিয়েছেন।
সালমান বলেন, স্কুলে কর্মরত আহত এক সৈনিককে হামাগুড়ি দিয়ে একটি দরজার পিছনে লুকানোর চেষ্টা করতে দেখেন এবং তারপর অজ্ঞান হয়ে যান তিনি।
“যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি,” বলেন তিনি।
সামরিক পোশাকে কয়েক জঙ্গি মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পেশোয়ারের ওই স্কুলে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের ওপর গুলি চালায়। পরে নিরাপত্তা বাহিনী স্কুলের দিকে অগ্রসর হলে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি হয়।
এ ঘটনায় নিহত ১৩০ জনের মধ্যে অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান বলেছে, সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালিয়েছে তারা।