তারা বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ

রুশ সীমান্তের কাছে গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের এমএইচ১৭ ফ্লাইট ভূপাতিত হওয়ার পর ঘুরেফিরে আলোচনায় এখন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের নাম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2014, 01:42 PM
Updated : 20 July 2014, 01:51 PM

বিইউকে গোত্রের অনেকগুলো মডেলের একটি এসএ-১১ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে ধারণা, যে ঘটনায় প্রাণ হারান উড়োজাহাজটির ২৯৮ জন আরোহীর সবাই।

রয়্যাল ইউনাটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের (আরইউএসআই) উড়োজাহাজ বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রোঙ্ক দাবি করেছেন, আকাশে ‘গ্রিজলি’ নামে পরিচিত এ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের প্রতিক্রিয়া এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় উড়োজাহাজটি।

যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইলকে তিনি বলেছেন, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্রের স্প্লিন্টারগুলো বিমানের ইঞ্জিন, দুই ডানা, তেলের ট্যাংক এবং কেবিনে আঘাত করায় এতে আগুন ধরে যায়। ঘটনার আকস্মিকতা এতটাই দ্রুত ছিল যে, যাত্রী আর ক্রুরা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতেই পারেননি।     

ব্রোঙ্ক বলেন, স্প্লিন্টারবোঝাই ক্ষেপণাস্ত্রটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে কোনো বিমানকে চোখের পলকে টুকরো টুকরো করে দেয়ার মতো ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দিয়ে। এমএইচ১৭ এর ভাগ্যেও যথারীতি সেটাই হয়েছে।  

মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়ে, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রটির আঘাতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল, বিমানটি আকাশেই বিধ্বস্ত হওয়ার পর ওই এলাকার মানুষজন এর ক্রু আর যাত্রীদের দেহ টুকরো কাপড়ের মতো পড়তে দেখেছেন।  

আর বিমানের ধ্বংসাবশেষ যেভাবে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে, তাতেই ক্ষেপণাস্ত্রটির বিধ্বংসী শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, বলেন ব্রোঙ্ক।

তিনি বলেন, “ট্র্যাকার বসানো ক্ষেপণাস্ত্রটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে গোলাকার কয়েক মিটার জায়গাজুড়ে এর স্প্লিন্টারগুলো ছড়িয়ে পড়ে। স্প্লিন্টারগুলো বিমানের বিভিন্ন অংশ যেমন ইঞ্জিন, ডানা এবং তেল ট্যাংকে ঢুকে যাবে। এর ফলে বিমানের জ্বালানিতে আগুন ধরে যাবে।

“এটির মতো (এমএইচ১৭) বড় আকৃতির উড়োজাহাজ যাত্রীদের সহজে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার মতো উচ্চচাপে তৈরি। ফলে এ ধরনের উড়োজাহাজ বিস্ফোরিতও হয় তাৎক্ষণিকভাবে।”

“ফলে যাত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝেই উঠতে পারবেন না, কী হচ্ছে।”

ইউক্রেইনের আকাশে এই বিমানটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার জন্য পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলছে। ইউক্রেইন সরকার বলছে, এই কাজ রুশপন্থি বিদ্রোহীদের; অন্যদিকে বিদ্রোহীদের অভিযোগ সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে।

স্নায়ুযুদ্ধের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার জন্য মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য বিইউকে তৈরি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

পরে এই ‘মিসাইল সিস্টেম’ এর নিয়মিত উন্নয়ন ঘটানো হয়, যাতে যুক্ত হয় আরো আধুনিক প্রযুক্তি। প্রতিটি বিইউকে সিস্টেমের সঙ্গে একটি উৎক্ষেপণ মঞ্চ, একটি রাডারবাহী যান ও একটি কমান্ড কমপ্লেক্স যুক্ত থাকে। একটি সিস্টেমে একসঙ্গে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ব্যবস্থা থাকে, যেগুলোর দৈর্ঘ্য ১৯ ফুট, ওজন ৫৫ কেজি।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি থেকে ৭২ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। আর ভূপাতিত হওয়ার আগে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানটি উড়ছিল ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায়।

রুশ ভাষায় বিচ গাছকে বলা হয় ‘বুক’। সেখান থেকেই ‘বিইউকে’ নামের উৎপত্তি। আর ন্যাটো এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম দিয়েছে ‘গ্যাডফ্লাই’ বা ডাঁশ মাছি।

১৫৪ পাউন্ড (৭০ কেজি) উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক বহনে সক্ষম বিইউকে ক্ষেপণাস্ত্র উত্তপ্ত করতে ৫ মিনিট এবং ছোড়ার জন্য প্রস্তুত করতে ১২ মিনিট সময় লাগে। আর ছোড়ার ৮ থেকে ১২ সেকেন্ডের মধ্যে এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

আঘাত হানার পর এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ।