২৯৮ জন আরোহীসহ দুদিন আগে ভূপাতিত মালয়েশিয়ার বিমানটির আলামত রুশপন্থি বিদ্রোহীরা নষ্ট করে দিচ্ছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেইন সরকার।
Published : 19 Jul 2014, 10:21 PM
বিধ্বস্ত বিমানের নিহত যাত্রীদের পরিচয় প্রকাশ
বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে বিদ্রোহীদের বাধা
এমএইচ১৭: রুশ-পশ্চিম টানাপড়েনে নতুন মোড়
উভয় পক্ষের সম্মতি নিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তা সংস্থা ওএসসিই’র প্রতিনিধিরা বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানে ধ্বংসাবশেষ দেখতে যেতে চাইলেও বিভিন্ন স্থানে বাধার মুখে পড়েছে।
রুশ মদদপুষ্ট বিদ্রোহীরা বিশেষজ্ঞদের ভিড়তে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ ইউক্রেইন সরকারের। তবে মস্কোপন্থি বিদ্রোহীরা পাল্টা অভিযোগ করেছে, সরকারই আলামত দেখতে যেতে বাধার সৃষ্টি করছে।
ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে সরকার ও বিদ্রোহীদের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জাতিসংঘ জানালেও তাতে সাড়া মিলছে না।
ধ্বংসাবশেষ দেখে বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানে মালয়েশিয়ার একটি তদন্ত দল কিয়েভে পৌঁছেছে। দোনেস্ক অঞ্চলের গ্রাবোভো গ্রামে বিমান দুর্ঘটনাস্থলে যেতে পর্যবেক্ষক মহলকে বাধা দেয়ার ঘটনাকে ‘অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেছে দেশটি।
এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে থাকা রুশ সরকারও ইউক্রেইনে বিবদমান উভয় পক্ষকে বলেছে, যেন বিশেষজ্ঞদের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যেতে দেয়া হয়।
আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার পূর্ব ইউক্রেইনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনেস্ক এলাকায় বিধ্বস্ত হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৭ ফ্লাইটটি। এতে ২৯৮ আরোহীর সবার মৃত্যু হয়।
রাশিয়ার দেয়া ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমানটি ভূপাতিত হয় বলে ইউক্রেইন সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
তবে বিদ্রোহীরা তা অস্বীকার করে ইউক্রেইন সরকারকে দায়ী করে বলছে, এত ওপর থেকে বিমান ভূপাতিত করার প্রযুক্তি তাদের হাতে নেই।
পরিদর্শক দলকে সতর্ক করতে এক বন্দুকধারী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেন ইউরোপীয় নিরাপত্তা সংস্থা ওএসসিই’র প্রতিনিধিরা।
তবে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট স্বঘোষিত দোনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার বোরোদাই বলেন, বোয়িং-৭৭৭টি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে, সে এলাকাটিতে তারা পৌঁছানোর সুযোগ পাননি। সেখানে ছড়িয়ে থাকা বিমানের ২৯৮ জন আরোহীর মৃতদেহগুলো নিয়ে তিনি চিন্তিত।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থলে তার একজন দাদি রয়েছেন। তার বসত ঘরে একটি মৃতদেহ এসে পড়েছে। তিনি বার বার এটি সরানোর অনুরোধ করলেও তারা সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
“ঘটনাস্থলে তীব্র রোদের মধ্যে নিরাপরাধ মানুষগুলোর মৃতদেহ পড়ে আছে। এভাবে যদি বিলম্ব হতে থাকে, তাহলে আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করব। বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে সহযোগিতা করতে আমরা রাশিয়াকে অনুরোধ করেছি।”
পরিস্থিতি শামাল দিতে রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন ইউক্রেইনের এই বিদ্রোহীদের এক নেতা।
ইউক্রেইনের প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াৎসেনিয়ুক বলেন, সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ধ্বংসাবশেষে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের যেতে বাধা দিচ্ছে। যেতে চাইলে বন্দি করার হুমকিও দিয়েছে তারা।
বিধ্বস্ত বিমানের নিহত যাত্রীদের জিনিসপত্র লুটতরাজ হচ্ছে বলেও দাবি করেছে ইউক্রেইন সরকার।
তবে গ্রাবোভো গ্রামের একজন বিদ্রোহী রয়টার্সকে জানান, বিধ্বস্ত এলাকায় লুটতরাজের খবর পেয়ে তারা কিছু মৃতদেহ ট্রাকে করে নিয়ে এসেছেন। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারা বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও মৃতদেহগুলো সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ঘটনাস্থল দিয়ে তিনি ইউক্রেইনের কয়েকটি যুদ্ধ বিমান টহল দিতে দেখেছেন। সেখান থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে।
বেশ কয়েকজন উদ্ধারকর্মীকে মৃতদেহগুলো সংগ্রহ করে কালো ব্যাগে ভরতে দেখেছেন রয়টার্সের এক সাংবাদিক।
দুর্ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণে কারা আছেন সে বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত দোনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের ঘোষণা দেয়া বিদ্রোহীরা ওই এলাকায় তল্লাশি চৌকি ও নিরাপত্তা বেষ্টনি বসিয়েছে।
নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যান্ড্রি লিসেঙ্কো বলেন, “বিদ্রোহী যোদ্ধারা দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মীদেরকে ওই অঞ্চলে ঢুকতে দিয়েছে। তবে সেখান থেকে কিছুই আনতে দেয়নি। সেখানে যা পাওয়া যাচ্ছে সবই তারা নিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিমানের ব্ল্যাক বক্স কোথায় আছে তা আমরা জানতে পারিনি। তবে বিদ্রোহীরা তা পেয়েছে বলে দাবি করেছে।”
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব আসার পর উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে সেখানকার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি শান্ত নয়। শুক্রবার রাতেও লুহানস্কের কয়েকটি স্থানে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে বলে ইউক্রেইন সরকার জানিয়েছে।