প্রায় পাঁচশ যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া দক্ষিণ কেরিয়ার ফেরিটি দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর খবরটি সর্বপ্রথম উদ্ধারকর্মীদের জানায় এক স্কুলছাত্র।
Published : 22 Apr 2014, 11:09 PM
অথচ ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার সময় নির্লিপ্ততার জন্য দায়িত্বশীল নাবিকদেরকে ‘হত্যার’ অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ১৭৪ আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ‘চই’ নামের ওই স্কুলছাত্র নিখোঁজের তালিকাতেই রয়ে গেছে।
ডুবে যাওয়ার আগে ফেরিটি অকস্মাৎ একদিকে কাত হয়ে গেলে ওই ছাত্র আতঙ্কিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১৯ এর জরুরি নম্বরে কলে করে জানায়। ফায়ার সার্ভিস দুই মিনিটের মধ্যে ওই কলটি উপকূলরক্ষীর কাছে ফরওয়ার্ড করে। এরপর ফেরিতে থাকা আরো ২০ শিশু জরুরি নাম্বারে কল করেছিল বলে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান।
ফেরির ৪৭৬ আরোহীর মধ্যে ৩৩৯ জনই ছিল একটি হাই স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষক। দুর্ঘটনার পর ১৭৪ জনকে উদ্ধার করা গেলেও স্কুল পড়ুয়া শিশুদের অনেকেই এখনো ডুবন্ত ফেরির ভেতরে আটকা আছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এমবিসি টিভিকে বলেন, ফোন করার সময় শিশুটির কন্ঠ কাঁপছিল এবং সে জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার জন্য আবেদন জানাচ্ছিল।
“আমাদের বাঁচান! আমরা একটি ফেরিতে আছি, মনে হচ্ছে ফেরিটি ডুবে যাচ্ছে,” ফোনে বলছিল শিশুটি। দমকল বাহিনী ফোনের রিসিভারটি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে দিতে বললে ছাত্রটি বলে, “আপনি কি টিচারকে দিতে বলছেন”? কোরিয়ান ভাষায় টিচার ও ক্যাপ্টেনের উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি।
দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ ফেরির ক্যাপ্টেনসহ অন্যান্য নাবিকদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে মামলা করেছে। তারা এখন আটক। কেন গতি না কমিয়ে তারা জাহাজটির মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করেছিল সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তারা।
জাহাজের মালিকের অর্থ লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে বিদেশে জাহাজ কোম্পানিটির অর্থ লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফেরিটি ডুবে যেতে দেখে এর ক্যাপ্টেনসহ কয়েকজন ক্রু তা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে। এর আগে তারা আরোহীদেরকে নিজ নিজ কেবিনে অবস্থান করার কথা বলে যান।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই নাবিকদের এ কর্মকাণ্ডকে ‘হত্যাকাণ্ডের শামিল’ বলে অভিহিত করেন।
শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বাধায় তা হয়নি। কোরিয়ান সমাজে জ্যেষ্ঠদের কথা মানাটাই রীতি। আর তা মানতে গিয়েই তাদের প্রাণ দিতে হয়েছে।