ইসরায়েলের সদ্যপ্রয়াত নেতা শিমন পেরেজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হাত মেলালেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
Published : 30 Sep 2016, 05:07 PM
শুক্রবার জেরুজালেমের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দু’ নেতার করমর্দনের এ দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এ সময় দুজনের মধ্যে কিছু কথাও হয়েছে।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে হাত মেলানোর পরপরই আব্বাস বলে ওঠেন “অনেক দিন পর, অনেক দিন পর।” ওদিকে, আব্বাসকে স্বাগত জানিয়ে নেতানিয়াহুও বলেন, “এটি এমন একটি জিনিস যা আমরা আমাদের এবং জনগণের পক্ষ থেকে অত্যন্ত মূল্য দেই।”
তবে জেরুজালেমে আব্বাসের এ বিরল সফরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে এই করমর্দনটুকু ছাড়া আর বেশিকিছু ঘটার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা ২০১৪ সাল থেকেই স্থবির হয়ে আছে। ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে নেতানিয়াহু এবং আব্বাস দুইজনের মধ্যেই ঘোরতর বিরোধ আছে। ২০১০ সাল থেকে দু’নেতা মুখোমুখি বৈঠকেই বসেননি।
পেরেজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আব্বাসকে সামনের সারিতে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড তুস্ক এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মাঝামাঝি জায়গায় আসন দেওয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কয়েক মুহূর্তের জন্য আব্বাসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস এর আগে ২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর শেষবার জেরুজালেম সফরে গিয়েছিলেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসস্থানে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতিতে আলোচনায় অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে ছিল সেই সফর।
হিলারি ক্লিনটন আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন।
আব্বাস ও নেতানিয়াহু ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর শেষবার প্যারিসে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে প্রকাশ্যে করমর্দন করেছিলেন।
শিমন পেরেজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা জড়ো হয়েছেন। লাখো মানুষ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেরেজ তেল আবিবের একটি হাসপাতালে বুধবার ৯৩ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
দুই সপ্তাহ আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পেরেজ।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পেরেজ দুইবার প্রধানমন্ত্রী ও একবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
ফিলিস্তিনের সঙ্গে ১৯৯৩ সালে শান্তি চুক্তির পরের বছর ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন ও ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
সরকারের দায়িত্ব ছাড়ার পর জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন পেরেজ। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে চলা পেরেজ সেন্টার ফর পিসের কর্মকাণ্ডেই সময় ব্যয় করতেন বেশি। বেসরকারি এ সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।
পেরেজ প্রায়ই তার বক্তৃতায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলিদের ‘দাবি কমানোর’ প্রয়োজনের কথা বলেছেন।
ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলের ‘নিকটতম প্রতিবেশী’ উল্লেখ করে পেরেজ একবার বলেছিলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের উচিৎ একে অপরের ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু’তে পরিণত হওয়া।