এল সালভাদরে দুই যুগ আগে গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী এক কর্নেলকে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
Published : 11 Feb 2016, 06:36 PM
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত বুধবার ওই সামরিক কর্মকর্তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে স্পেনে ফেরত পাঠানোর আবেদনে সায় দেয় বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। তাকে বাংলাদেশ ফেরত চাইলেও এখনও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে।
এল সালভাদরের যে কর্নেলকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তার নাম ইনোসেন্তে অরলান্দো মন্তানো মোরালেস। তার বিরুদ্ধে ছয়জন খ্রিস্টান পাদ্রি, তাদের গৃহকর্মী ও তার মেয়েকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মধ্য আমেরিকায় স্পেনের সাবেক উপনিবেশ এল সালভাদরে ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে ১৯৮৯ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি দল ব্যারাক থেকে বেরিয়ে জেসুইট সেন্টারে ঢুকে ওই আটজনকে হত্যা করে।
ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত ক্ষুদ্র এই দেশটির সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। পাদ্রি হত্যার পর দৃশ্যপট বদলে যায়। সামরিক বাহিনীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের পর গৃহযুদ্ধ অবসানে শান্তি চুক্তির পথ খোলে।
নিহত ছয় পাদ্রির পাঁচজনই ছিলেন স্পেনের নাগরিক। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে সেখানে; মন্তানো ও অন্য ১৯ জন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে শুধু মন্তানো কারাগারে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে বসবাস করে আসা মন্তানোকে ২০১১ সালে অভিবাসন আইনে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা।
মন্তানোকে স্পেনে ফেরত পাঠানো হলে তার সঙ্গে পলাতক অন্য আসামিদেরও বিচার করা যাবে বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে বাকি থাকছে শুধু পররাষ্ট্র দপ্তরের চূড়ান্ত অনুমতি। এই পদক্ষেপকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে গার্ডিয়ান বলছে।
মন্তানোকে হস্তান্তরের মামলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবাধিকারকর্মী ও বিচার বিভাগের একটি বিশেষ ইউনিটের উদ্যোগের ফসল হিসেবে এই ‘যুদ্ধাপরাধীকে’ বিচারের মুখোমুখি করার পথ খুলেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি নির্দেশনা উপেক্ষা করে তারা এটা করছে। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব হত না বলেও মনে করছেন তারা।
একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে দুই বছর আগে আল-বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে। আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রে ও মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
এছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীও যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
দণ্ডিত এই সব অপরাধীদের ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হলেও তাতে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।