এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতদিনের এই রাষ্ট্রীয় শোকে ভারতজুড়ে রাষ্ট্রীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বুধবার কালামের জন্মস্থান তামিলনাডুর রামেশ্বরামে তার দাফন হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের প্রধান শহর শিলংয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৮৪ বছর বয়সে মারা যান কালাম। শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তার মরদেহ ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ একটি হেলিকপ্টারে করে শিলং থেকে আসামের প্রধান শহর গুয়াহাটি বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সি-১৩০ বিমানে করে কালামের কফিন পৌঁছায় রাজধানী নয়া দিল্লিতে।
ভারতের তিন বাহিনীর প্রধানরা এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বলে এনডিটিভির খবরে জানানো হয়।
এপিজে কালামের মৃত্যুর খবরে দুই দিনের কর্ণাটক সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার সকালেই দিল্লি ফেরেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
আজীবন মানুষকে অনুপ্রাণিত করা এই ‘জ্ঞান সাধকের’ মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোক নেমে এসেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছন। কালামের সম্মানে মঙ্গলবার ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন বাতিল করা হয়েছে।
সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাবেক এই রাষ্ট্রপতির কফিন বিকেলে কালামের দিল্লির বাসভবনে রাখা হবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
সোমবার রাতে কালামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে আমার মন, তার সঙ্গে কতো অন্তরঙ্গতা ছিল। তার গভীর জ্ঞানে সব সময়ই চমৎকৃত হতাম, তার কাছ থেকে কত কিছু শিখেছি।”
স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এক ট্যুইটে বলেন, “ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. আব্দুল কালামের হঠাৎ মৃত্যুতে গভীর দুঃখবোধ করছি। পুরো প্রজন্মকে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন।”
পোখরানে দুই নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণেরও নেতৃত্ব দেন কালাম। পরে ২০০২ সালে ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট হন।
তবে যে ভূমিকার জন্য তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হবে বলে মনে করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো, তা হল প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনকে (ভারতীয় প্রেসিডেন্টের বাসভবন) সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া, যা তাকে জনতার রাষ্ট্রপতি অভিধা এনে দেয়।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তিনি সবসময় জনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, বিশেষভাবে শিশুদের সঙ্গে। এ কারণেই তিনি জনতার মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন অনেকে।
“তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো জ্বলো,” এক অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতায় এ কথা বলেছিলেন কালাম।
ভারতীয় ফাস্টপোস্ট পত্রিকা মঙ্গলবার লিখেছে, কালাম নিশ্চিতভাবেই ‘সূর্য হয়ে’জ্বলেছিলেন। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় সেই সূর্য অস্ত গেছে। এই সূর্য আর কখনো উদিত হবে না।