যে কাজগুলো চান নি স্টিভ জবস

একগুঁয়েমির জন্য বেশ পরিচিতি ছিল প্রয়াত অ্যাপল গুরু স্টিভ জবসের। আইফোন আর আইপ্যাডের আকার আকৃতি থেকে শুরু করে আনুষাঙ্গিক পণ্যের অনেক কিছু নিয়ে জবসের এই একগুঁয়েমি হয়েছে সমালোচকদের আলোচনার বিষয়। বলে রাখা ভাল, ‘ঘাড়-ত্যারামি’ সত্ত্বেও বাজারে সফল হয়েছে জবসের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া সিংহভাগ অ্যাপল পণ্য।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2015, 11:09 AM
Updated : 17 Feb 2015, 11:09 AM

জবস মারা গেছেন ২০১১ সালে। জীবদ্দশায় এই টেক গুরু অ্যাপল পণ্যে জন্য যে ফিচার বা প্রযুক্তি ‘কখনোই থাকবে না’ বলেছিলেন, তার অনেকগুলোই এখন উপস্থিত অ্যাপলের বর্তমান পণ্যগুলোতে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল স্টিভ জবসের আদর্শ থেকে খানিকটা হলেও সরে এসেছে বললেও ভুল বলা হবে না।

অ্যাপলের বর্তমান পণ্যে বিদ্যমান কিন্তু জবসের নিতান্তই অপছন্দের এমন ৫টি ফিচার বা প্রযুক্তি সম্পর্কে জানিয়েছে সিএনএন।

স্টাইলাস: অ্যাপলের পরবর্তী আইপ্যাডের সঙ্গে অ্যাকসেসরিজ হিসেবে স্টাইলাস ডিভাইসের অভিষেক হবে বলে সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এক বাজার বিশ্লেষক। মজার ব্যাপার হল ২০০৭ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোর ম্যাক ওয়ার্ল্ডে আইফোন উন্মোচনের সময় স্টাইলাস অ্যাকসেরিজকে এক কথায় উড়িয়েই দিয়েছিলেন জবস।

“স্টাইলাস কে চায়? এটা টেনে বের করতে হয়, কাজ শেষে গুছিয়ে রাখতে হয় তারপর আপনি এটি হারিয়ে ফেলেন। ইয়াক! কেউ আসলে স্টাইলাস চায় না। তাই চলুন স্টাইলাস ব্যবহার না করি। -- আইফোন উন্মোচন করার সময় এমনটাই বলেছিলেন জবস।

১৯৯৭ সালে অ্যাপলে ফিরে জবস শুরুতেই যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলন তার মধ্যে একটি হল ‘নিউটন’ উৎপাদন বন্ধ করা। ট্যাবলেট ধাঁচের ডিভাইস ছিল নিউটন, স্টাইলাস ছিল এতে।

ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের লেখা জবসের জীবনী অনুযায়ী, “ইশ্বর আমাদের ১০টি স্টাইলাস দিয়েছেন, আরেকটা আবিষ্কারের দরকার নেই।”-- স্টাইলাস সম্পর্কে এমন মন্তব্যও করেছিলেন জবস।

ছোট ট্যাবলেট: ছোট স্ক্রিনের ট্যাবলেটও ছিল জবসের ‘চক্ষুশূল’। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনায় ট্যাবলেটের জন্য ভালো অ্যাপ বানাতে সর্বনিম্ন ১০ ইঞ্চি ডিসপ্লের ট্যাবলেট দরকার বলে মত ছিল তার।

ছোট স্ক্রিনের ট্যাবলেটে ছবির আকার অনেক ছোট হওয়ায়, তা ব্যবহার উপযোগী নয় বলে মনে করতেন তিনি।

জবসের মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর অ্যাপল ছোট আকারের আইপ্যাড মিনি বাজারে ছাড়ে, যা প্রতিষ্ঠানটির ছাড়া সব আইপ্যাডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হিসেবে গণ্য হয়।

বড় ফোন: ২০১০ সালে অ্যাপলের আইফোন ৪’র অ্যান্টেনা নিয়ে উঠে তুমুল আলোচনার ঝড়। সেসময় আইফোনের অ্যান্টেনার মান বাড়াতে অনেকেই স্মার্টফোনটি বড় করার পরামর্শ দেন স্টিভ জবসকে। এমন পরামর্শ রীতিমত হাস্যরস করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ফোনটিকে ‘হাতুড়ি’ বলে উপহাস করেছিলেন জবস। এ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আপনি কখনোই এটি হাতে নিতে পারবেন না। এটা কেউই কিনবে না।”

জবস মারা যাওয়ার প্রায় এক বছর পর আগের চেয়ে লম্বা আইফোন ৫ বাজারে ছাড়ে। আর গত বছর আরও বড় আইফোন ৬ ও আইফোন ৬ প্লাস বের করে প্রতিষ্ঠানটি।

বাস্তবসম্মত সফটওয়্যারের নকশা: বাস্তব জীবন অনুসরণ করে আইফোনের সফটওয়্যারগুলোর নকশা বানাতে চেয়েছিলেন স্টিভ জবস।

বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিল রাখতে অ্যাপল’স মেইলে ব্যবহার করা হয় লিনেন ব্যাকগ্রাউন্ড। কাঠের শেলফের মতো করে বানানো হয় আইবুক স্টোর আর নোটস অ্যাপও ছিল পুরো আসল প্যাডের মতো দেখতে।

জবসের পছন্দের সফটওয়্যার ডিজাইনার স্কট ফোরস্টালকে বহিষ্কার করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পরের বছর বের করা হয় আইওএস ৭, যা বাস্তব জীবনের সঙ্গে একেবারেই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।

জনকল্যাণমূলক কাজ: জনকল্যাণমূলক কাজে বেশ নিরুৎসাহী ছিলেন জবস। ১৯৯৭ সালে তিনি অ্যাপলের সব জনহিতকর কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। তিনি অ্যাপলের লাভ বাড়ানোর জন্য চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ লাভ অর্জনের পরও তিনি সেসব কার্যক্রম আর শুরু করেননি।

এইডস নিয়ে গবেষণার জন্য ইউটুর ভোকালিস্ট বোনো’র চ্যারিটির সঙ্গে অ্যাপল সরাসরি যুক্ত থাকলেও, জবস ব্যাক্তিগতভাবে খুব একটা দান করতেন না।

২০১১ সালে টিম কুক অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর দ্বায়িত্ব নেয়ার পর জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে তার প্রথম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বেছে নেন।