রবার্ট টেইলরের জীবনাবসান

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন আধুনিক কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের পথপ্রদর্শক রবার্ট টেইলর। তার বয়স হয়েছিল ৮৫।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2017, 09:18 AM
Updated : 17 April 2017, 09:18 AM

পার্কিনসন’স রোগে ভুগছিলেন তিনি। ১৩ এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইড-এ নিজের বাসভবনে তার মৃত্যু হয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে জানিয়েছেন তার ছেলে কার্ট।

আজকের এই ইন্টারনেট তৈরির পেছনে অসংখ্য মানুষের অবদান রয়েছে। কিন্তু টেইলরকে এর পথ প্রদর্শক বিবেচনা করা হয়, বলা হয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট-এর প্রতিবেদনে।

১৯৬৬ সালে পেন্টাগনের অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি-তে গবেষক হিসবে কাজ করার সময় হতাশাগ্রস্থ ছিলেন তিনি। তার হতাশার কারণ ছিল, তাকে অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে যোগা্যোগ করতে তিনটি পৃথক টার্মিনাল ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে যে কম্পিউটার ব্যবহার করছেন সেগুলোও  জুতসই নয়।

এ সমস্যা সমাধানে ‘আর্পানেট’ আনেন তিনি। তার এই আর্পানেট প্রতিটি প্রকল্পকে একটি মাত্র কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এখন এটিকেই আমরা ইন্টারনেট হিসেবে জানি।

টেইলর সঠিকভাবেই অনুমান করতে পেরেছিলেন যে, এই নেটওয়ার্ক একদিন মানুষের জন্য জরুরী ও কার্যক্ষম বস্তু হবে।

১৯৬৮ সালে একটি কাগজে টেইলর লিখেন, “কয়েক বছরের মধ্যে মানুষ সামনা সামনি কথা বলার চেয়ে মেশিনের মাধ্যমে আরও কার্যকরভাবে যোগা্যোগ করতে পারবে।”

এরপর ১৯৭০ সালে জেরক্স-এর পলো অল্টো রিসার্চ সেন্টারে যোগ দেন তিনি। এখানে তিনি ‘অল্টো’ কপিউটারের নকশা এবং সৃষ্টিতে অবদান রাখেন। একে পার্সোনাল কম্পিউটারের পথ প্রদর্শক বলা হয়।

অল্টো প্রথম এমন কম্পিউটার যেখানে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেইস-এর ওপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন করে। পরবর্তীতে এই ধারণা অনুসরণ করেই আজকের অপারেটিং সিস্টেমগুলো বানানো হয়েছে।

এছাড়া ইথারনেট নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তিও তৈরি করেছেন টেইলরের দল। শুধু তাই নয় ‘ব্রাভো’ নামের ‘হোয়াট-ইউ-সি-ইজ-হোয়াট-ইউ-গেট’ শব্দ প্রক্রিয়াকরণ প্রোগ্রামেরও নেপথ্যে নায়ক তার দল। বর্তমানে এটি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মূল ভিত্তি।

কম্পিউটার মাউস তৈরির পেছনেও অবদান রয়েছে টেইলরের। ১৯৬১ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সময় তিনি মানুষের সঙ্গে কম্পিউটারের পারস্পরিক যোগাযোগ নিয়ে ধারণা পান।

পরবর্তীতে তার এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে আরও তহবিল দিয়ে কম্পিউটারের মাউস তৈরি করা হয়, যা আজকের ম্যাকিন্টস এবং উইন্ডোজ কম্পিউটারের মূল যন্ত্রগুলোর একটি।

১৯৩২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ডালাসে জন্মগ্রহণ করেন টেইলর। ১৬ বছর বয়সে তিনি সাউদার্ন মেথডিস্ট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। কিন্তু সেখানে তিনি খুব গুরুগম্ভীর ছাত্র ছিলেন না। কোরিয়ান যুদ্ধের সময় মার্কিন নেভি রিজার্ভ হিসবে যোগ দেন তিনি। এখান থেকে ফিরে আবারও পড়াশোনা শুরু করেন। অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে সাইকোলজিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন টেইলর।

আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তিতে তার নেতৃত্ব এবং উন্নয়নের কারণে ১৯৯৯ সালে তাকে ন্যাশনাল মেডেল অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে অবসর নেন টেইলর।