ব্রেক্সিট নিয়ে প্রযুক্তি খাতের প্রতিক্রিয়া

২৪ জুন যুক্তরাজ্যের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের খবর আসার পর প্রযুক্তি বিশ্বে চলছে নানা আলোচনা। এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশটি শেয়ার বিপর্যয় থেকে শুরু করে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিনিধিরা।

নাজিয়া শারমিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 10:27 AM
Updated : 26 June 2016, 10:27 AM

সম্প্রতি ‘ঐতিহাসিক’ গণভোটের রায়ে যুক্তরাজ্যের জনগণ জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর ২৮ দেশের ইউরোপীয় পরিবারের সঙ্গে থাকতে রাজি নন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গঠনের পর যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ, যারা এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে; যার প্রক্রিয়াকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘ব্রেক্সিট’।

বেক্সিটের ঘোষণার পরপর  বিটি, টকটক এবং সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সেইজ-এর শেয়ারের দর পতন হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।

যুক্তরাজ্য বিশেষ করে লন্ডন বহু বছর ধরেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।

প্রযুক্তিগত ব্যবসায়কে আরও উন্নত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের ‘টেক সিটি’ প্রোগ্রামটির অধীনে শত শত স্টার্টআপ সুবিধা পাচ্ছিল। কিন্তু ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের এ বিচ্ছেদের পর কর্মচারী এবং গ্রাহক উভয়ই ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের শুরুতে টেক সিটির অনেকগুলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানে ১৫ লাখ ৬০ হাজার কর্মচারী নিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সোয়া তিন লাখই লন্ডনের। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয় ডিজিটাল অর্থনীতি সম্পূর্ণ যুক্তরাজ্যে তৃতীয় দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র।

লন্ডনভিত্তিক ডিজিটাল সংস্থা ব্যাটেনহলের প্রতিষ্ঠাতা ড্রিউ বেনভি বলেছেন, “স্থানীয় বাজার স্তিমিত হয়ে যেতে পারে বলে আমি চিন্তিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি সবার কাছে পরিষ্কার যে লন্ডন একটি প্রধান প্রযুক্তি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে- লন্ডনে সকল প্রধান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বড় কার্যালয় রয়েছে।”

১০০০টি ইউরোপিয়ান ও ব্রিটিশ ব্যবসায়ের উপর করা একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর মাত্র এক চতুর্থাংশের ব্রেক্সিট ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য ‘বাস্তব পরিকল্পনা’ আছে।

এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপস্থাপন করা বাণিজ্য সমিতি টেক ইউকে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, “ইইউ সদস্য থাকার সুবিধা ছাড়াই যুক্তরাজ্যকে সফল হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টার প্রয়োজন।”

এদিকে ইইউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক তহবিল প্রদান করেছে, তা নিয়েও সমস্যা হতে পারে। চেস্টারে সি-টেক ইনোভেশন-এর মতো প্রতিষ্ঠান একটি যৌথ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছে, যাতে ভবিষ্যৎ লাভবান হওয়ার উৎস হচ্ছে ইইউ।

ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিবিসি কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে-

•      ২০ শতাংশ ডিজিটাল বাণিজ্য বলেছে ইইউ-এর দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যও প্রতিভার খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

•      ট্র্যান্সফারওয়াইজ এবং গোকার্ডলেস-এর মত অর্ধেকেরও বেশি ইউরোপিয়ান আর্থিক প্রযুক্তি ‘ইউনিকর্ন’ যুক্তরাজ্যভিত্তিক।

•      ইইউ-তে মোবাইল গেইমিং নিয়ে প্রায় ২১ হাজার কর্মক্ষেত্র রয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যে পাঁচ হাজার সারাদিন কর্মরত কর্মচারীসহ সবচেয়ে বড় শেয়ার আছে।

•      ইউরোপিয়ান কমিশনস হরাইজন ২০২০ প্রোগ্রাম হতে ক্লিন টেক-এর উন্নতির জন্য ৫০ লাখ ইউরো পুরস্কার সহজলভ্য।

•      ইইউ-এর কাছ থেকে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্য বেসরকারি খাতে ১৪০ কোটি পাউন্ড তহবিল গ্রহণ করেছে।

কেপিএমজি ইউকে-এর প্রযুক্তি প্রধান টুডর অউ বলেছেন, “প্রযুক্তি এমন এক বিভাগ যা কেবল প্রয়োজনে বিস্তৃতি লাভ করে এবং সীমানা ছাড়াই কাজ করে।”

গণভোটে যুক্তরাজ্যের ইইউত্যাগ নিশ্চিত হওয়ার পরপর পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। টেক সিটি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন ক্যামেরন-এর সাবেক উপদেষ্টা রোহান সিলভা। তিনি এক টুইটে বলেছেন, “আমি আরও বিশ্বাস করি ব্রিটেন সবসময় খোলাখুলি, সৃজনশীল ও উদ্যোক্তা থাকবে।”

তবে এ বিচ্ছেদের ফলে ব্রিটিশ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন মোবাইল প্রতিষ্ঠান ইইউ-এর কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জার্মান স্টার্টআপস গ্রুপ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টোফ গার্লিংগার বলেছেন, “আমরা আশা করছি বার্লিন-এর তুলনায় লন্ডনে নতুন ইনকর্পোরশন-এর সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাবে আর সফল স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।”