রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাবের (আরআইএল) বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণ আরআইএল বলছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় গড় বাজার মূলধন কমেছে ০.৬৪%। আর বাজার মূলধন হ্রাসের সঙ্গে হাওলা ৯.২৬% ও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ৪.৪২%।
সার্বিক বাজার
মাপকাঠি | চলতি সপ্তাহ | গত সপ্তাহ | পরিবর্তন |
ডিএসসিএক্স সূচক | -০.০৫% | -১.৮১% | ৯৭.০২% |
গড় বাজার মূলধন (কোটি টাকা) | ৩১৬৬৩২.২৭ | ৩১৮৬৮৩.৯৪ | -০.৬৪% |
মোট লেনদেন (কোটি টাকা) | ২০৫৭.০৯ | ২১৫২.২৪ | -৪.৪২% |
মোট পরিমাণ (কোটি টাকা) | ৫৯.০৬ | ৭০.১০ | -১৫.৭৫% |
মোট হাওলা | ৫২৯৭৫৯ | ৫৮৩৭৯২ | -৯.২৬% |
মুনাফা-ঝুঁকি অনুপাত | -0.০৮ | -২.৪৪ | ১০৩.২১% |
সূত্রঃ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব, রয়্যাল ক্যাপিটাল লিমিটেড
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অনেক বিনিয়োগকারীরাই শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি বিনিয়োগ থেকে।
সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে গড়ে প্রতি ইউনিট ঝুঁকি গ্রহণের বিপরীতে মুনাফার পরিবর্তে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়েছে।
প্রতি ১ ইউনিট ঝুঁকির বিপরীতে এই লোকসানের পরিমাণ ০.৩৫, যা এর আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ১.২১ গুণ বেশি।
এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে আরআইএল বলছে, যা বাজারের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল এবং আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে এই দুর্বল অবস্থা আরও খারাপের দিকে গিয়েছে।
এ সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচক ০.০৫% (২.৪৭ পয়েন্ট) হ্রাস পেয়েছে ও বাজার ঝুঁকির মাত্রা ছিল ০.৪৮%।
বাজারের তীব্র নিম্নমুখী প্রবণতা পরিষ্কার বোঝা যায় অ্যাডভান্সড-ডিক্লাইন (এডি) রেশিও থেকে। গত সপ্তাহের শেষে এডি রেশিও ছিল ০.৯৯, তবে গত সপ্তাহের শেষ দিনে তা নেমে আসে ০.৯৬-এ।
গেল সপ্তাহে গোটা বাজার নিম্নমুখী থাকলেও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন মোট বাজার মূলধনের ৩৪.২৩% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪.৪৪%। অর্থাৎ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেনি, বরং বেড়েছে।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ
গত সপ্তাহে জুট (১০৫.১০) এবং পেপার ও প্রিন্টিং (৫১.৫৭) খাতারের ছিল সর্বাধিক পি-ই রেশিও, যা এ দুটি সেক্টরের কোম্পানিগুলোর মুনাফার তুলনায় তাদের শেয়ারের উচ্চ চাহিদাকে নির্দেশ করে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য লক্ষণীয়, গত সপ্তাহে পেপার ও প্রিন্টিং খাতের শেয়ারে বেশি পি-ই রেশিও দেখা গেলেও দুটি খাতের শেয়ারই বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দিতে পারেনি; বরং লোকসানের মুখোমুখি করেছে।
সেক্ষেত্রে এই খাতের শেয়ার কেনার ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের উচ্চমাত্রার সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বলে মনে করে আরআইএল।
লক্ষণীয় শেয়ার
এ সপ্তাহে সাপ্তাহিক মুনাফার দিক থেকে শীর্ষ ৫ শেয়ার ছিল লিবরা ইনফিউশন (৩৪.৪%), জেমিনি সিফুড (৩২.২%), অ্যাপেক্স ফুড (৩০৩০%), ফু-ওয়াং সিরামিকস (২২.২%) এবং এরামিট (১৪.১%)।
সর্বনিম্ন মুনাফার দিক থেকে শীর্ষ ৫ শেয়ার- আইটিসি (-২২.৩%), ঢাকা ডাইং (-২১.৪%), বিডিঅটোকারস (-১৫.৯%), অলটেক্স (-১৫.৯%) এবং আজিজ পাইপ (-১৩.৪%)।
দামের ওঠানামায় ঝুঁকির পরিমাপে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৫ শেয়ার ছিল- ব্যাট বিসি (৬৫.৯০), লিন্ডে বিডি (৪৬.৮১), জেমিনি সিফুড (৪৪.৯২), লিবরা ইনফিউশন (৪৪.৬১), ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস (৩৯.৯৩)।
টাকার পরিমাপে বাজারে মোট লেনদেনের শতাংশ হিসেবে সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মা (৪.৩৩%), সিটি ব্যাংক (৩.৮৩%), বেক্সিমেকো ফার্মা (৩.৩০%), অ্যাপোলো ইস্পাত (২.৭০%) এবং আইটিসি (২.৬৩%)।
অন্যদিকে সপ্তাহের মোট লেনদেনকৃত শেয়ারের সংখ্যার অনুপাতে সর্বোচ্চ শেয়ার লেনদেন হওয়া শীর্ষ ৫ কোম্পানি- ইউনাইটেড এয়ার (৬.৪২%), সিটিব্যাংক (৫.৫১%), অ্যাপোলো ইস্পাত (৪.৭০%), ফু-ওয়াং সিরামিকস (৩.৫২%) এবং অলটেক্স (৩.০৩%)।
মোট বাজার মূলধনের অনুপাতে সর্বোচ্চ মূলধন সৃষ্টিকারী ৫ শেয়ার ছিল- জিপি (১১.০৫%), ব্যাট বিসি (৫.৬৫%), স্কয়ার ফার্মা (৫.১৮%), লাফার্জ সুরমা (২.৬৪%) এবং রেনেটো (২.১১%)।
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে আইটিসি (১৭৮৯৩), সিভিও পেট্রো (১১৬৫১), অলটেক্স (১০৫৮৯), এমারেল্ড অয়েল (১০২৩৪), ইউনাইটডে এয়ার (১০০০৫)।
আগামী সপ্তাহের পূর্বাভাস
গত সপ্তাহ এবং তার আগের কয়েক সপ্তাহের বাজার পরিস্থিতি ও গবেষণার প্রেক্ষিতে, আগামী সপ্তাহের বাজার আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে ধারণা আরআইএল এর।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ধারণা, সূচকের ওঠানামা গত সপ্তাহের মতোই থাকতে পারে; সেই সঙ্গে বাজার থেকে লাভ তুলে নেওয়া খুব বেশি সহজ হবে না।
তবে গত সপ্তাহের নিম্নমুখী প্রবণতা আগামী সপ্তাহে কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।