ফেনী সকারের পাল্টে যাওয়ার গল্প

পেশাদার লিগে ফেনী সকারের অবস্থা অতটা ভালো নয়। ২০০৯ সালে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে যাত্রা শুরুর পর থেকে বরাবরই কোনোমতে অবনমন এড়িয়ে আসছে তারা। সেই দলটিই এবার স্বাধীনতা কাপের রানার্সআপ হয়ে চমক দেখিয়েছে। মূলত বিদেশি কোচ আর ফুটবলারদের ছোঁয়াতেই এভাবে পাল্টে গেছে ফেনীর এই ফুটবল ক্লাবটি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2014, 06:48 AM
Updated : 14 April 2014, 08:26 AM

২০০৯ সালে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে যাত্রা শুরুর পর অনেকটা জোড়াতালির দল গঠন করে কোনোমতে পেশাদার ফুটবল লিগে টিকে রয়েছে ফেনী সরকা। এবারের লিগের প্রথম পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকায় তলানিতে আছে দলটি।

খেলোয়াড়রা কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের ডরমিটরিতে থাকছে গাদাগাদি করে। কমলাপুরের মাঠে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ম্যাচ চলছে। তাই সেখানে অনুশীলনের খুব একটা সুযোগ না পাওয়ায় কখনো বাফুফের টার্ফে, কখনো ব্রাদার্স ইউনিয়নের মাঠে অনুশীলন করতে হয় তাদের। ফেনী সকার কর্মকর্তারাও হয়তো কখনো ভাবেননি, এভাবে একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে তারা।

এই ফেনী সকারকে পাল্টে দিয়েছে বিদেশি কোচ ও খেলোয়াড়। অধিনায়ক আকবর হোসেনের জানান, ফেনী সকার এর আগে কখনোই বিদেশি খেলোয়াড় নেয়ার ব্যাপারে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। অন্য দলগুলোর সঙ্গে এই জায়গাটাই পার্থক্য হয়ে যেতো। গাম্বিয়ান কোচ ওমর কে সিসে শেষ পর্যন্ত তার স্বদেশি পাঁচজন খেলোয়াড় নিয়ে আসেন। নিজের পকেটের টাকায় উনি ওদের বিমান ভাড়াটা পর্যন্ত দিয়েছেন।

“এই গাম্বিয়ান খেলোয়াড়দের অর্ন্তভূক্তিতে দলের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বলা যায়, দলের চেহারাটাই পাল্টে গেছে। যার মূল কৃতিত্ব কোচের। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলব আমরা। শেষ পর্যন্ত তাই হলো।”

গাম্বিয়ান কোচ ওমর কে সিসে ঢাকায় প্রথম আসেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের অ্যাকাডেমি দলের কোচ হিসেবে। এ মৌসুমেই তিনি সাময়িক দায়িত্ব নিয়েছেন ফেনী সকারের। কর্মকর্তারা বলেছিলেন, দলের পারফরম্যান্স ভালো হলেই পুরো দায়িত্ব দেয়া হবে তাকে।

ফেডারেশন কাপে ভালো করতে না পারা এবং লিগে দলের দুর্দশা। সব মিলিয়ে এই গাম্বিয়ান কোচের অবস্থানটাই অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল।

বিনয়ী ওমার সিসে অবশ্য এই টুর্নামেন্টে ভালো করার পুরো কৃতিত্বই দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের।

“এই টুর্নামেন্টে আমরা যা কিছু করতে পেরেছি, তা খেলোয়াড়দের চেষ্টারই ফল। আমি শুধু পেছন থেকে কিছুটা চেষ্টা করেছি মাত্র। খেলোয়াড়রা যদি নিজেদের উজাড় করে না দিত, তাহলে কিছুই সম্ভব হতো না।”

সিসে অবশ্য তার স্বদেশি খেলোয়াড়দের কথা আলাদা করে বললেন, “তবে হ্যা, বিদেশি খেলোয়াড়রা আসায় দলের শক্তি অনেকটাই বেড়েছে। এই টুর্নামেন্টে ভালো করার ক্ষেত্রে যা সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। আমি আশাবাদী, এবারের লিগেও আমরা ভালো করবো।”

দ্বিতীয় বিভাগ লিগ দিয়ে ১৯৮৮ সালে ফেনী সকারের ক্লাব ফুটবলে যাত্রা শুরু। ২০০৯ সালে বসুন্ধরা কাপ ফুটবল (জেলা ফুটবল) টুর্নামেন্ট দিয়ে প্রথম তাদের সামনে জাতীয় পর্যায়ের দরজা খোলে। ওই আসরে রানার্সআপ হওয়ার সুবাদেই পেশাদার লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে তারা।

বাফুফের সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি। মূলত তাঁর পৃষ্ঠপোষকতাতেই দলটি এতদিন পেশাদার লিগে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে।