বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ।
Published : 25 Jul 2013, 01:41 PM
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) করা দুটি আপিলের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও অনুমতি দিয়ে আদালত বলেছে, চূড়ান্তভাবে এই নির্বাচন বৈধ থাকবে কি-না, সেটি নির্ভর করেবে আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির রায়ের উপর।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মূল রিটের বাদীপক্ষে ছিলেন, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ও কেএম হাফিজুল আলম।
শুনানিতে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে মডেল গঠনতন্ত্র দেয়ার ক্ষমতা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের রয়েছে।
তিনি যুক্তি দেখান, যাদের মডেল গঠনতন্ত্র দেয়ার ক্ষমতা আছে, তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করারও ক্ষমতা রাখে।
"আইসিসির প্রেসার আছে, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ক্রীড়া পরিষদ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "এই মামলা জটিলতার কারণে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে আমাদের আইসিসির সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এই সদস্যপদ বাতিল হলে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।"
রিটকারী পক্ষে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এনএসসির মডেল গঠনতন্ত্র দেয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র সংশোধন করার ক্ষমতা তাদের নেই। বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১১ ধারা অনুসারে এই ক্ষমতা শুধু বিসিবির। এই ধারা অনুসারে বিসিবি সংশোধনের প্রস্তাবনা এনএসসিতে পাঠাবে। এনএসসির কোনো পরামর্শ থাকলে তারা সেটা বিসিবির কাছে পাঠাতে পারে।
তিনি বলেন, এনএসসির প্রস্তাব বিসিবির সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হতে হবে। এনএসসি নিজে থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না। বিসিবির সাধারণ পরিষদের অনুমোদন ছাড়া বিসিবির গঠনতন্ত্রের কোনো বৈধতা নাই। ২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিসিবিই কেবল তাদের গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবে।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আদালত ক্রিকেট কাউন্সিল ও ক্রীড়া পরিষদের আপিলের আবেদন মঞ্জুর করেছে। একইসঙ্গে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই নির্বাচন টিকবে কি-না, সেটা আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের ওপর নির্ভর করবে।
মাহবুব শফিক বলেন, আপিলের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি আদালত আপাতত সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছে। তবে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সংশোধনী বাতিল হলে এই নির্বাচনও বাতিল হয়ে যাবে।
আইনজীবী কেএম হাফিজুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর শেষ হয়। পরের দিন বর্তমানের অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব নেয়। নির্বাচিত কমিটি থাকতে বিসিবি ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিকট প্রথম প্রস্তাবনা পাঠায়। বিদায়ের দিন তারা পরিষদের নিকট দ্বিতীয় প্রস্তাবনা পাঠায়।
“পরিষদ বোর্ডের পাঠানো প্রস্তাবনায় অনুমোদন না দিয়ে তাদের মত করে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে, আমরা রিটে এই বিষয়গুলোই চ্যালেঞ্জ করি।”
তিনি বলেন, বিসিবির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হলে সেটা বোর্ডের নির্বাহী কমিটি ও সাধারণ পরিষদের অনুমোদনের পর ক্রীড়া পরিষদের পাঠানোর নিয়ম। এই নিয়ম অনুসারে বিসিবির সভাপতি ও কাউন্সিলর নির্বাচনের নিয়ম ক্রীড়া পরিষদের কাছে পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবনায় নির্বাচিত আঞ্চলিক ক্রীড়া বডিগুলো থেকে আঞ্চলিক প্রতিনিধি নেয়ার বিধান রাখা হয়। ক্রীড়া পরিষদ এই প্রস্তাবনা পরিবর্তন করে ডিসির মনোনয়নে আঞ্চলিক প্রতিনিধি করার বিধান রাখে। এ রকম আরো কয়েকটি পরিবর্তনকে চ্যালেঞ্জ করে এই রিট করা হয়।
“বিসিবিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত অবাধ সুষ্ঠুর নির্বাচনের জন্য এ সব পরিবর্তন করা হচ্ছিল। কিন্তু এই প্রস্তাবনায় এনএসসির হস্তক্ষেপে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েই যাবে।”
গত বছর নভেম্বরে বিসিবির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে বোর্ডকে একটি চিঠি দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)।
ওই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাই কোর্টে আবেদন করেন বিসিবির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ইউসুফ জামিল বাবু এবং বিসিবির সাবেক পরিচালক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী।
১৩ ডিসেম্বর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে বিসিবিকে দেয়া এনএসসির চিঠি তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ঐ চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আব্দুর রবের বেঞ্চ ওই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
রায়ে বলা হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের অধিভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবে না।
তাই আদালত বিসিবির গঠনতন্ত্রের সংশোধনীকে অকার্যকর এবং বাধ্যতামূলক নয় বলে রায় দিচ্ছে।
হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সকালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে দুটি আবেদন জমা দেয়া হয়। ওই দুটি আবেদনের শুনানি করে চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের রায় স্থগিত করে নিয়মিত আপিল করতে বলে। আপিল আবেদনের শুনানি শেষে দুপুরে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।
আপিলের উভয় আবেদনের সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবেদনও ছিল।