চার দশকের হিসাব চুকিয়ে ফাইনালে আতলেতিকো

ঘরের মাঠে জিতে ৪২ বছর আগের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। সেমি-ফাইনালের ফিরতি পর্বে বায়ার্ন মিউনিখকে হারাতে না পারলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে ঠিকই পৌঁছে গেছে স্পেনের ক্লাবটি। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় জার্মান দলটির কাছে ২-১ গোলে হারলেও মূল্যবান অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে ফাইনালের টিকেট পেয়েছে দিয়েগো সিমেওনের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2016, 08:52 PM
Updated : 4 May 2016, 12:57 PM

দুই লেগ মিলিয়ে লড়াইয়ের ফল ২-২; ভিসেন্তে কালদেরনে প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছিল আতলেতিকো।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে এই বায়ার্নের কাছে শিরোপা হারিয়েছিল আতলেতিকো। পরে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ফের ফাইনালে উঠলেও রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে যায় তারা। আগামী ২৮ মে মিলানের সান সিরোয় ফাইনালে ইউরোপ সেরা হওয়ার তৃতীয় সুযোগটা পাবে মাদ্রিদের দলটি। প্রতিপক্ষ তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল না ম্যানচেস্টার সিটি জানা যাবে বুধবার রাতে।

এই ম্যাচের আগে আতলেতিকো শেষ গোল খেয়েছিল ৬০২ মিনিট আগে। অন্যদিকে, ঘরের মাঠে শেষ ১১টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে ৪১টি গোল করে বায়ার্ন। মঙ্গলবার রাতের ম্যাচটির চিত্রও ছিল প্রায় এই পরিসংখ্যানের মতো। অতিথিদের জমাট রক্ষণের বিপক্ষে জার্মান ক্লাবটির দুর্দান্ত আক্রমণভাগের লড়াই।

প্রথম লেগে হেরে আসায় আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে গোল পেতে মরিয়া বায়ার্ন। আতলেতিকোর পরিকল্পনা ঠিক তার উল্টো, নিজেদের রক্ষণ সামলে পাল্টা আক্রমণে ওঠে তরেস-গ্রিজমানরা।

২৪তম মিনিটে সহজ একটি সুযোগ হারায় বায়ার্ন। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে ফ্রাঙ্ক রিবেরির বাঁকানো শট গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক ঠেকিয়ে দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ছয় গজের বক্সের সামনে পড়া ফিরতি বলে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি রবের্ত লেভানদোভস্কি।

৩১তম মিনিটে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তায় কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় বায়ার্ন; ডি বক্সের একটু বাইরে থেকে চাভি আলোনসোর নেওয়া ফ্রি-কিকে বল জোসে মারিয়া হিমেনেসের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬৩৩ মিনিট পর আতলেতিকোর জালে বল জড়ালো।

তিন মিনিট পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো স্বাগতিকরা; ডি বক্সের মধ্যে হাভি মার্তিনেসকে উরুগুয়ের ডিফেন্ডার হিমেনেস ফাউল করলে পেনাল্টি পায় বায়ার্ন, কিন্তু টমাস মুলারের দুর্বল স্পটকিক সহজেই ঠেকিয়ে দেন ওবলাক।

দ্বিতীয়ার্ধেও একই রকম প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে ৫৪তম মিনিটে আতলেতিকো পেয়ে যায় মহামূল্যবান অ্যাওয়ে গোল। মাঝ মাঠের আগে থেকে ফের্নান্দো তরেসের লম্বা পাস ধরে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে ডি বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন অঁতোয়ান গ্রিজমান।

এই গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরার পাশাপাশি ফাইনালে ওঠার পথে অনেকখানি এগিয়ে যায় আতলেতিকো। কারণ এই অবস্থায় দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়া মাদ্রিদের ক্লাবকে পিছনে ফেলতে কমপক্ষে আরও দুটি গোল করতে হতো বায়ার্নকে।

তবে এত সহজে হাল ছাড়ার দল নয় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। ৭৫তম মিনিটে বায়ার্নকে আবারও ম্যাচে এগিয়ে দেন লেভানদোভস্কি। চিলির মিডফিল্ডার ভিদালের হেড থেকে বল পেয়ে পাল্টা হেডে লক্ষ্যভেদ করে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইনে ২-২ সমতা আনেন পোল্যান্ডের এই স্ট্রাইকার।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লেভানদোভস্কির এটা নবম গোল। ১৬ গোল করে তালিকায় শীর্ষে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।

৮৪তম মিনিটেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারতো আতলেতিকো। স্প্যানিশ স্ট্রাইকার তরেসকে বায়ার্নের মার্তিনেস ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন তরেস নিজেই।

পেনাল্টি মিসের হতাশায় শেষ পর্যন্ত আতলেতিকোর ফাইনালে ওঠার আনন্দে ভাটা পড়েনি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ৪২ বছরের হিসাব পুরোপুরি চুকানোর আনন্দ।

বায়ার্নের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্নটা আর পূরণ হলো না আগামী মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিতে যাওয়া পেপ গুয়ার্দিওলার। ২০১৩ সালে এখানে যোগ দেওয়ার পর টানা তিন মৌসুমে প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে উঠলেও এই গণ্ডি পেরুতে পারেননি বার্সেলোনার হয়ে দুবার শিরোপাটি জেতা এই স্প্যানিশ কোচ।

এই তিনবারের প্রতিবারই বায়ার্নের বাধা স্পেনের দলগুলো; প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদ, গতবার বার্সেলোনা আর এবার রিয়ালেরই প্রতিবেশী আতলেতিকো।